সারা সপ্তাহ জুড়ে কর্মব্যস্ততা আর সপ্তাহান্তে হুল্লোড়-পার্টিতে জীবনের রসদ খোঁজার চেষ্টা। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এমনটাই ছিল তরুণ প্রজন্মের জীবনযাত্রা। কিন্তু বর্তমানে সেই ট্রেন্ডের বদল নজরে এসেছে। ভারতের জেন জি-দের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এক নতুন আধ্যাত্মিক ট্রেন্ড-‘ভজন ক্লাবিং’। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এই ট্রেন্ডে ক্লাবের পার্টির পরিবেশে গাওয়া হচ্ছে ভজন, কীর্তন ও আধ্যাত্মিক সঙ্গীত। আলো-সাজ, বাদ্যযন্ত্র, আর বন্ধুদের সঙ্গ- সবমিলিয়ে এটি হয়ে উঠছে তরুণ প্রজন্মের জন্য এক ধরনের ‘ক্লিন হাই’, যার সঙ্গে নেই মদ, মাদক বা লাউড পার্টির কোলাহল।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শহরে তরুণরা ছোট লাউঞ্জ, স্টুডিও, ক্যাফে কিংবা খোলা জায়গায় জমায়েত হয়ে গিটার, কাহন, উকুলেলে বা ড্রামের তাল-লয়ে গেয়ে উঠছে, 'হরে রাম, হরে কৃষ্ণ', 'গোবিন্দ বোলো, হরি গোবিন্দ বোলো' বা জনপ্রিয় ভক্তিমূলক ফিউশন গান। অনেক ক্ষেত্রে এই অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করছেন তরুণ শিল্পীরা। যেমন ‘ব্যাকস্টেজ সিবলিংস’ প্রাচি ও রাঘব আগরওয়াল যাদের ভজন ক্লাবিং ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
এই ট্রেন্ডে কেন জেন জি এত বেশি আকৃষ্ট? আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে, দিন দিন তরুণ প্রজন্ম অনলাইন-কেন্দ্রিক, ব্যস্ত এবং মানসিক চাপগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তারা একইসঙ্গে আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহী হলেও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছেন না। আর এখানেই ভজন ক্লাবিং যেন তাদের জন্য এক 'সেতু'র কাজ করছে।
আধ্যাত্মিকতা, বন্ধুদের সঙ্গে সময়, লাইভ মিউজিকএবং মাদকবিহীন আনন্দ-সবই এখানে একসঙ্গে মিলছে। তরুণদের কেউ কেউ এটিকে বলছে, 'মাইন্ডফুল পার্টি', আবার কারওর মতে, 'সোলকানেক্ট ইভেন্ট'। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এক ধরনের 'পোস্ট-মডার্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি', যেখানে ভক্তি আর বিনোদন একসঙ্গে একটি নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করছে। তরুণদের জন্য এটি হয়ে উঠছে চাপ কমানোর, সামাজিকভাবে সংযুক্ত হওয়ার এবং ভক্তির মাধ্যমে মানসিক শান্তি পাওয়ার একটি সহজ পথ।
ভজন ক্লাবিং নিয়ে যদিও সাধারণ মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকে বলছেন, 'এটাই আধুনিক যুগের সৎসঙ্গ','নতুন প্রজন্ম ভক্তিকে নতুনভাবে দেখছে'- যা অনেকের কাছেই বেশ প্রশংসনীয়। আবার সমালোচনার তিরও উঠতে বাদ যায়নি। নিন্দুকদের মতে, 'ক্লাবের ভেতর ভজন মানায় না'। “এটা স্রেফ পার্টির নতুন গিমিক”-এমন মনোভাবও রয়েছে নেটাগরিকদের একাংশের।
