বিশ্বজুড়ে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নারী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এটি বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার—২০২২ সালে প্রায় ৬.৬ লক্ষ নতুন রোগী এবং প্রায় ৩.৫ লক্ষ মৃত্যু রেজিস্টার হয়েছে। ভারতেও প্রতি বছর হাজার হাজার নারী এই রোগে আক্রান্ত হন।

তবে রোগটি যতই গুরুতর হোক, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে সার্ভিক্যাল ক্যানসার সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য। পাশাপাশি এর টিকাকরণ অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। ফলে রোগ-সচেতনতা, সঠিক স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়—যা সার্ভিক্যাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া সার্ভিক্যাল ক্যানসার নির্মূলের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলকের দিকে এগোচ্ছে—এমনটাই জানাচ্ছে সেন্টার ফর রিসার্চ এক্সিলেন্স ইন সার্ভিক্যাল ক্যানসার কন্ট্রোল-এর সদ্য প্রকাশিত জাতীয় প্রতিবেদন। গবেষকদের দাবি, সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে ২০৩৫ সালের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নির্মূল করতে সক্ষম হবে।

প্রধান সাফল্যগুলো
২৫ বছরের কম বয়সি মহিলাদের মধ্যে এখন সার্ভিক্যাল ক্যানসারের হার শূন্য। এটি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি বিপ্লবাত্মক অর্জন, যা দেখায় টিকাকরণ এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং কতটা কার্যকর হতে পারে।
সারভাইভাল রেট বা রোগ থেকে সেরে ওঠার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। উন্নত চিকিৎসা, দ্রুত নির্ণয় এবং সচেতনতার বৃদ্ধি এই সাফল্যের প্রধান কারণ।

স্ব-সংগ্রহভিত্তিক স্ক্রিনিং বা সেলফ কালেকশন সিস্টেম—যার মাধ্যমে নারীরা নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন—অনেক পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে স্ক্রিনিং-এর আওতায় এনেছে। বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকা বা যাদের চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ কম, তাঁদের জন্য এটি গেম-চেঞ্জার হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গিয়েছে

এত সাফল্যের মধ্যেও একটি গুরুতর বাধা সামনে এসেছে:

এইচপিভি টিকাকরণ এবং স্ক্রিনিং রেট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
এটি ভবিষ্যৎ অগ্রগতিকে মন্থর করতে পারে। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন—টিকাকরণ, সচেতনতা প্রচার এবং নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব আরও জোরাল ভাবে তুলে ধরতে হবে।

পরিসংখ্যান এবং অগ্রগতি আশা জাগাচ্ছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্ভিক্যাল ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা টিকাকরণ এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং থাকলে প্রায় সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। এই দুই ক্ষেত্রেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম সফল দেশ। ফলে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা শুধু আকাঙ্ক্ষিত নয়, বাস্তবসম্মতও।

সব মিলিয়ে, অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যেই মানবজাতির ইতিহাসে এক বড় স্বাস্থ্য-বিপ্লবের প্রান্তে দাঁড়িয়ে। টিকাকরণ এবং স্ক্রিনিং কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, ২০৩৫ সালে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নির্মূল শুধু সম্ভাবনা নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে—এমনটাই বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের।