ভারতে নিজের বাড়ি কেনা জীবনের অন্যতম বড় স্বপ্ন এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বিনিয়োগ। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এই স্বপ্ন পূরণে হোম লোন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তবে শুধু লোন নেওয়া নয়, ইএমআই কীভাবে পরিকল্পনা করবেন, তার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের আর্থিক চাপ ও সঞ্চয়—উভয়ই।
2
11
কম ইএমআই দিলে মাসিক বোঝা কম মনে হলেও, লোনের মেয়াদ বাড়তে থাকে। এতে সুদের পরিমাণও বিপুলভাবে বেড়ে যায়। আবার কিছুটা বেশি ইএমআই দেওয়া গেলে লোন দ্রুত শোধ হয় এবং মোট সুদে লক্ষ লক্ষ টাকা বাঁচানো সম্ভব।
3
11
উদাহরণ হিসেবে ধরুন ৮৫ লক্ষ টাকার হোম লোন নিলেন ৮% সুদে ২০ বছরের জন্য। এই ক্ষেত্রে মাসিক ইএমআই দাঁড়াবে ৭০,০৪৩। পুরো মেয়াদে মোট সুদ দিতে হবে প্রায় ৮৩.১০ লক্ষ।
4
11
কিন্তু একই লোন যদি ২০ বছরের বদলে ১৫ বছরে শোধ করেন, তাহলে ইএমআই বেড়ে দাঁড়াবে ৮০,২৫২, কিন্তু মোট সুদ কমে হবে ৬০ লক্ষ। অর্থাৎ, মাত্র ১০,২০৯ বেশি ইএমআই দিলে আপনি ৫ বছর কম সময়ে লোন শোধ করতে পারবেন এবং সুদে বাঁচাবেন প্রায় ২৩.১০ লক্ষ। অর্থাৎ, স্মার্ট ইএমআই প্ল্যানিং মানে শুধু লোন শোধ করা নয়—এটি আপনার আর্থিক স্বাধীনতার পথ তৈরি করে।
5
11
বাড়ি কেনার সময় যত বেশি ডাউন পেমেন্ট দেবেন, তত কম ঋণ নিতে হবে। কম ঋণ মানেই কম মূলধন, কম সুদ, এবং সামগ্রিকভাবে স্বস্তির EMI। সুদ সবসময় বকেয়া মূলধনের ওপর হিসেব হয়। তাই লোনের পরিমাণ কমানোই হচ্ছে স্মার্ট স্টেপ।
6
11
বছরের শেষে বেতন বাড়ে, বোনাস মেলে—তখন EMI সামান্য বাড়ালে লোন দ্রুত শোধ হবে এবং সুদ কমবে। ধরুন, ৫৯.৬৫ লক্ষ লোন নিলেন ৮% সুদে ২০ বছরের জন্য। EMI হবে ৪৯,৮৯৪, এবং মোট পরিশোধ দাঁড়াবে প্রায় ১.২০ কোটি। যদি EMI বাড়িয়ে ৫৯,৮৯৪ করেন, তাহলে লোন শোধ হবে মাত্র ১৪ বছরে, আর সুদে বাঁচাবেন প্রায় ২১ লক্ষ।
7
11
অনেক সময় অন্য ব্যাংক বা NBFC কম সুদে হোম লোন দেয়। তখন লোন ট্রান্সফার বা রিফাইন্যান্স করলে বড় অঙ্কের সঞ্চয় হয়। আগের উদাহরণ অনুযায়ী, যদি একই লোন ৮% থেকে কমে ৭.৮% সুদে পাওয়া যায়, তাহলে EMI কমে দাঁড়াবে ৪৯,১৫৪, এবং মোট পরিশোধ নেমে আসবে প্রায় ১.১৭ কোটি।
8
11
বছরের শেষে বোনাস, FD ম্যাচুরিটি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড রিটার্ন—এসব দিয়ে আংশিক প্রিপেমেন্ট করলে মূলধন কমে যায়, ফলে সুদও নাটকীয়ভাবে কমে যায়। তবে প্রিপেমেন্ট চার্জ আছে কি না, তা আগে দেখে নিন।
9
11
টেনিউর বাড়ালে ইএমআই কমে অবশ্যই স্বস্তি আসে, কিন্তু মোট সুদ বেড়ে যায় অনেকটা। লোন রিটায়ারমেন্ট বয়সের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে যদি বেশিরভাগ মূলধন শোধ হয়ে যায়, তখন সাময়িকভাবে মেয়াদ বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হতে পারে।
10
11
লোন কমানোই লক্ষ্য নয়—বরং জীবনের বাকি লক্ষ্য পূরণ, যেমন—ভ্রমণ, সন্তান শিক্ষায় বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়—এসবের জন্য অর্থ মুক্ত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
11
11
ডাউন পেমেন্ট, EMI বাড়ানো, রিফাইন্যান্সিং, প্রিপেমেন্ট—এই সব কৌশল মিলিয়ে আপনি হোম লোনের বোঝা অনেকটাই কমাতে পারবেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।