বর্তমানে কম বয়সিদের মধ্যেও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা প্রকট। বয়স ২০ বা ৩০-এর ঘরে থাকাকালীনও ব্যথায় কাবু হতে হয় এই রোগের কোপ পড়লে। এই রোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গগুলি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ই সেগুলি ক্ষণস্থায়ী ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এটি করলেই বিপদ ডেকে আনবেন। কী কী দেখে বুঝবেন শরীরে বাসা বাঁধছে এই রোগ?
আর্থ্রাইটিসের প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হল জয়েন্টে ব্যথা। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের একটি বৈশিষ্ট্য হল ঘুম থেকে ওঠার পর কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য জয়েন্ট স্টিফ হয়ে যাওয়া। অনেক সময় গাঁটগুলি ফুলে যায়। এবং লাল হয়।
আর্থ্রাইটিস কেবল গাঁটেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি শরীরে ক্লান্তি, অলসতা এবং দুর্বলতাও সৃষ্টি করে। এই লক্ষণগুলি শরীরে প্রদাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিরিক্ত কার্যকলাপের কারণে হয়। আপনি যদি কোনও ভারী কাজ না করেও ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটি একটি সতর্কতামূলক লক্ষণ হতে পারে।
যদি হাঁটাচলা, ওঠা বা বসার সময় অথবা আঙুলগুলি বাঁকানোর সময় জয়েন্টগুলোতে শব্দ শুরু হয়, তাহলে এটি হাড়ের ক্ষয় এবং জয়েন্টগুলোতে তৈলাক্তকরণের অভাবের লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থা পরবর্তীতে অস্টিওআর্থারাইটিসে পরিণত হতে পারে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে, মাটিতে বসতে বা স্বাভাবিক কাজ করতে যদি অসুবিধা হয়, তাহলে এটিও আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। পেশী স্টিফ হয়ে যাওয়া এবং জয়েন্টের গতিশীলতা হ্রাস আর্থ্রাইটিসের শুরু হতে পারে।
আর্থ্রাইটিস একটি দুরারোগ্য রোগ হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা গেলে এটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জীবনযাত্রার উন্নতি, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমানো সম্ভব।
কী কী কারণে হতে পারে এই রোগ?
জিনগত কারণে উমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওআর্থারাইটিস হতে পারে। শরীরের কোষগুলিতে নির্দিষ্ট জিন রয়েছে যা অটোইমিউন প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এগুলি মা-বাবার কাছ থেকে তাদের সন্তানদের কাছে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে অস্টিওআর্থারাইটিস বৃদ্ধি পায় কারণ সেই সময় জয়েন্টগুলির মধ্যে থাকা তরুণাস্থি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যার ফলে হাড় থেকে হাড়ে ঘর্ষণ এবং ব্যথা এবং প্রদাহ হয়। এছাড়াও জিনগত বংশগতি, অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা এবং যেকোনো আঘাত অস্টিওআর্থারাইটিসকে আরও ত্বরান্বিত করে।
যেকোনো খেলাধুলা বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাত জয়েন্টের তরুণাস্থির ক্ষতি করতে পারে। এবং অস্টিওআর্থারাইটিস হতে পারে। এছাড়াও যদি আক্রান্ত জয়েন্টগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যেমন ভারী ওজন তোলা বা বারবার নড়াচড়া করা, তাহলে এটি আরও প্রদাহ এবং ব্যথার হতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার কারণে আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে কারণ। অতিরিক্ত শরীরের ওজন নিতম্ব, হাঁটু বা মেরুদণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই এই হাড়ের তরুণাস্থি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং ফ্যাটযুক্ত টিস্যু প্রদাহজনক যৌগ তৈরির জন্য দায়ী যা আর্থ্রাইটিসের কারণ হয়।
কিছু বিপাকীয় ব্যাধি যেমন গাউট হল এক ধরনর আর্থ্রাইটিস। যা জয়েন্টগুলিতে ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক জমা হওয়ার ফলে শুরু হয়।
