বর্তমানে সমাজ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ইউটিউবে ত্বকের যত্ন নিয়ে নানা ধরনের ট্রেন্ড ছড়িয়ে রয়েছে। কেউ বলছেন, বরফ ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে রাখলেই মিলবে উজ্জ্বল ত্বক, কেউ আবার টেপ দিয়ে মুখ টানটান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এই পদ্ধতিগুলো কতটা নিরাপদ বা কার্যকর? আসুন জেনে নেওয়া যাক-

১. বরফ ঠান্ডা জলে মুখ ডুবানোঃ এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে অনেকেই সকালে বরফ মেশানো ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে রাখেন। এতে ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল দেখায়। বিশেষজ্ঞের মতে, এটি সাময়িকভাবে ফোলাভাব কমাতে ও সতেজভাব আনতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দেয়। ফলে সংবেদনশীল ত্বকে লালচে ভাব ও শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ এই ট্রেন্ড মাঝে মাঝে করা যেতে পারে, কিন্তু নিয়মিত নয়।

আরও পড়ুনঃ অস্ত্রোপচার ছাড়াই চোখে সোনার ইনজেকশনে ফিরবে দৃষ্টি! যুগান্তকারী গবেষণায় দৃষ্টিহীনদের জন্য আশার আলো


২. ফেস টেপিংঃ এটি এমন একটি ট্রেন্ড যেখানে মুখে টেপ লাগিয়ে বলিরেখা টানটান রাখার চেষ্টা করা হয়। অনেক ইনফ্লুয়েন্সার এটিকে ‘নন-সার্জিকাল ফেসলিফট’ হিসেবে প্রচার করছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পুরোপুরি অস্থায়ী এবং নিয়মিত করলে ত্বকে টান, জ্বালা, এমনকী ত্বকে আঘাত লাগার ঝুঁকি থাকে। ফেস টেপিং কখনওই বোটক্স বা মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের বিকল্প নয়, এমনই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 


৩. স্কিন সাইক্লিংঃ এই পদ্ধতিতে সপ্তাহ জুড়ে নির্দিষ্ট দিন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রোডাক্ট যেমন রেটিনল, এক্সফোলিয়েন্ট, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞরা এই পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর বলে মনে করেন। কারণ এটি ত্বকের পুনর্গঠন ও কোষ পুনর্জন্মে সহায়তা করে। তবে ব্যক্তিভেদে প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ঘরোয়া টোটকায় স্কিনকেয়ার মাস্কঃ লেবু, টমেটো, বেকিং সোডা, মধু বা দই মিশিয়ে বানানো ‘প্রাকৃতিক’ ফেস মাস্ক এখন বেশ ভাইরাল। কিন্তু বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা, এসব উপাদানের পিএইচ মান ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, ফলে ত্বকে জ্বালাভাব, অ্যালার্জি, এমনকী দাগ পড়ার ঝুঁকি থাকে। ঘরোয়া উপাদানের বদলে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষিত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৫. এলইডি লাইট থেরাপিঃ লাল, নীল বা সবুজ রঙের এলইডি আলো ব্যবহার করে ত্বকের সমস্যা দূর করার এই পদ্ধতিটি তারকা মহলে খুব জনপ্রিয়। বিশেষজ্ঞের মতে, এটি কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। বিশেষত ব্রণ বা প্রদাহ থাকলে। চবে শর্ত একটাই: এটি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ও মানসম্মত ডিভাইস ব্যবহার করে করতে হবে। সস্তা বা নকল এলইডি ডিভাইস উল্টে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

৬. স্লাগিংঃ এই ট্রেন্ডে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে রাতে ময়েশ্চারাইজারের ওপর পেট্রোলিয়াম জেলি বা ঘন তেলজাত পদার্থ লাগানো হয়। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী হলেও তৈলাক্ত বা ব্রণপ্রবণ ত্বকে সমস্যা বাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, শুধু অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে স্লাগিং করা যেতে পারে, প্রতিদিন নয়।

ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা প্রতিটি স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড অনুসরণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ সকলের ত্বক এক রকম নয়। তাই কারওর জন্য কোনও একটি উপকারী হলেও অন্য কারওর জন্য তা ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই যে কোনও নতুন স্কিনকেয়ার পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 


আসলে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড অনেক সময় আকর্ষণীয় মনে হলেও, সব সময়ই তা বৈজ্ঞানিক নয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়মিত ক্লিনজিং, সানস্ক্রিন, এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার-এই তিনটি সহজ অভ্যাসই ত্বককে দীর্ঘসময় সুস্থ রাখতে পারে।