বিভাস ভট্টাচার্য: স্তনে ক্যান্সার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামাঞ্চলে সরকারি চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন এক মহিলা। চিকিৎসায় সমস্যা কখনও কমে আবার কখনও বাড়ে। শেষপর্যন্ত একটা সময় আসে যখন গ্রামের ওই চিকিৎসক তাঁকে জানান, এখানে আর কিছুই সম্ভব নয়। ক্যান্সার অনেকটাই ছড়িয়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। যেটা কলকাতার কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজ বা অন্য কোথাও গিয়ে করাতে হবে। গ্রাম থেকে যখন ওই মহিলা শহরে এলেন তখন পরীক্ষায় দেখা গেল ক্যান্সার দুরারোগ্য জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করেও আরোগ্যের লাভের সম্ভাবনা কম। এক অর্থে রোগী অনেকটাই দেরি করে এসেছেন।
সম্প্রতি কলকাতার রথীন্দ্র মঞ্চে ডক্টরস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে একটি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসকদের সঙ্গে ছিলেন কলকাতার বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন শল্য চিকিৎসক। অনুষ্ঠানে তাঁরা ব্যাখ্যা করেন স্তন ও শরীরের বাইরের অংশে ক্যান্সার হলে কখন রেফার করতে হবে। এসএসকেএম হাসপাতালের শল্য বিভাগের সঙ্গে যুক্ত অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ সিরাজ আহমেদ এই বিষয়টি তুলে ধরেন।
এবিষয়ে তিনি বলেন, 'চিকিৎসা চলাকালীন যদি দেখা যায় কোনও ক্যান্সার হোমিওপ্যাথি বা অ্যালোপ্যাথিতে ঠিক হবে না অর্থাৎ ওষুধে ঠিক হবে না এবং সেটার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন তখন দেরি না করে দ্রুত সেটা রেফার করতে হবে। সেটা এসএসকেএম বা অন্য যেকোনো বড় জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া বা রেফার করার দরকার আছে। অযথা যেন দেরি না হয়। এই বিষয়টিই অনুষ্ঠানে উপস্থিত গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।'

তাঁর কথায়, কিছু কিছু ক্যান্সার আছে যেখানে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। শুধু ওষুধে সারে না। সেই সমস্ত ক্যান্সার যেন অযথা দেরি করে বাড়িয়ে না দেওয়া হয় সেই বিষয়টিই চিকিৎসকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ, যত তাড়াতাড়ি এই রোগীরা আসবেন তত তাড়াতাড়ি তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন: একফোঁটা রক্ত করে দেবে কামাল, যুগান্তকারী আবিষ্কার করলেন গবেষকরা
স্তন ক্যান্সার ছাড়াও হাত, পা বা শরীরের কোথাও যদি কোনো টিউমার নজরে পড়ে সেইক্ষেত্রেও যেন অযথা দেরি করে সময় নষ্ট না করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় রোগী হাসপাতালে গিয়েছেন তাঁর টিউমার নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিত। পরীক্ষা করে কিছুদিন চিকিৎসা করার পরে একজন চিকিৎসককে কিন্তু বুঝতে হবে ওই টিউমার কোনো ওষুধে সারিয়ে তোলা সম্ভব কি সম্ভব নয়। যদি দেখা যায় শুধুমাত্র ওষুধ প্রয়োগ করে এই টিউমার নির্মূল করা যাবে না তখন দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে সেটা বড় কোনও প্রতিষ্ঠানে। অযথা বিলম্ব কিন্তু রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। অনুষ্ঠানে হাওড়া ও হুগলি ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা এলাকার চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের মতে, স্তন ক্যান্সারের শিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলারা হলেও পুরুষদেরও এই রোগ হতে পারে। সেকারণে মহিলাদের পাশপাশি পুরুষদেরও সচেতন করা হয়। যদিও পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাটা মহিলাদের তুলনায় খুবই কম। তাও সম্ভাবনা আছে বলেই চিকিৎসকরা এবিষয়ে তাঁদের সতর্ক করেন। এক্ষেত্রে লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে স্তনের কোনও অংশ ফুলে ওঠা। স্তনের আকারের পরিবর্তন। স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়ার মতো লক্ষণ।
