আজকালের প্রতিবেদন:‌ ‘‌যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’‌— তাঁর প্রিয় গান। গাইতেনও চমৎকার। সম্প্রতি রবীন্দ্র সদনে এক অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন কিন্তু অন্য গানে, ‌‘‌ও যে মানে না মানা’‌। অনুরোধ সত্ত্বেও গাইলেন না প্রিয় গানটি। কিন্তু ৭ মে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আগের দিন সত্যিই নশ্বর পদচিহ্ন মুছে গেল প্রাণবন্ত মানুষটির। চলে গেলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের কো–‌চেয়ারপার্সন, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির গভর্নিং বডির সদস্য, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর, আজকাল ডট ইন পোর্টালের প্রধান সম্পাদক মৌ রায়চৌধুরী। বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। মঙ্গলবার সকালে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রেখে গেলেন স্বামী সত্যম রায়চৌধুরী, পুত্র দেবদূত এবং অগণিত সহকর্মী ও অনুরাগীকে।
মৌ রায়চৌধুরীর অকালপ্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সাহিত্য–‌সংস্কৃতিতে গভীর অনুরাগের জন্য খ্যাতি ছিল তাঁর। কবিতা লেখার হাতটি ছিল চমৎকার। প্রকাশিত বইগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সুস্থ, সফর ও খেলা পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন মৌ রায়চৌধুরী। তাঁর লেখা অন্য ঘরানার সম্পাদকীয় ও তাঁর অভিনব বিষয় পরিকল্পনা নতুন মাত্রা যোগ করেছিল পত্রিকাগুলিতে। তাঁর সম্পাদনায় গত কয়েক বছর ধরে শারদীয় আজকাল নজরকাড়া সাফল্য পায়। আজকাল প্রকাশনের কর্ণধার হিসেবে ‘‌ভাল বই পড়বই’‌ স্লোগানকে সার্থক করে তুলেছিলেন মৌ রায়চৌধুরী। তাঁর উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে একের পর এক বেস্টসেলার।
বাংলা ছবি প্রযোজনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে তাঁর হাত ধরে। তাঁর সহ–‌প্রযোজনায় গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘‌শঙ্খচিল’‌ পেয়েছিল জাতীয় পুরস্কার।
তবে যে–‌‌গুণটির জন্য তিনি সর্বজনপ্রিয় ছিলেন, তা হল তাঁর মধুর স্বভাব। মঙ্গলবার বিকেলে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত বিশিষ্ট মানুষ থেকে স্বজন, সেলেব্রিটি থেকে সহকর্মী, সবাই সারাক্ষণ স্মৃতিচারণায় উদ্‌যাপন করেছেন এক বর্ণময় জীবন। সল্টলেকে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের সদর দপ্তর, আজকাল ভবন ও নিউ টাউনে সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান কর্মী, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। ‘‌আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’‌, সুরের ঢেউয়ে ‘‌হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে’‌। আগুন যাকে গ্রাস করতে পারে না, সেই অবিনশ্বর কীর্তির আলোয় মৌ রায়চৌধুরী বেঁচে থাকবেন হাজার বছর, পরশমণি হয়ে প্রাণিত করবেন সবাইকে।‌‌‌‌‌