গোপাল সাহা: বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতির সুর চড়েছে সপ্তমে। গত নভেম্বরের ৪ তারিখ থেকেই বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার কারণে শাসকবিরোধী তরজার চিত্র যেমন যথেষ্ট উদ্বেগজনক, আবার নির্বাচন কমিশনকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে দ্বিধাবোধ করেনি কখনও শাসক দল, আবার বিরোধীদল উভয়েই। 

 

আর এবার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ শুনানি পর্বে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নোটিশ পাওয়া এবং তাঁর বৃদ্ধা মাকে শুনানির ডাক নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবার চড়েছে চরম পর্যায়ে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে কেন্দ্র সরকার বিজেপির বি টিম দাগিয়ে দিয়ে। 

 

বলা বাহুল্য, এই বিষয় নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে কমিশনকে প্রশ্ন করা হলে তারা জানিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ৯০ বছর বয়সি মাকে শুনানির জন্য ডাকার বিষয় নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে কোনও প্রবীণ নাগরিকের ক্ষেত্রে কেন্দ্র পর্যন্ত এসে শুনানিতে হাজির হওয়ার প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে বাড়িতে গিয়েই শুনানি সম্পন্ন করবেন বিএলও (BLO)। 

 

নির্বাচন কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, সাংসদের মা হওয়ার কারণে কোনও বিশেষ ব্যবস্থা বা ছাড় দেওয়া হবে না। বার্ধক্যজনিত কারণে কেউ যদি BLO-র কাছে আবেদন করেন, তাহলে নিয়ম মেনেই বাড়িতে গিয়ে শুনানির প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।

প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও বাড়িতে শুনানি, জাতীয় কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবে রাজ্য। প্রতিবন্ধী ভোটারদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট BLO-কে জানিয়ে বাড়িতে শুনানির জন্য আবেদন করতে হবে। 

 

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শারীরিকভাবে অক্ষম ভোটারদের বাড়িতে শুনানির বিষয়টি নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন সিইও।

মাইক্রো অবজারভার নিয়ে কটাক্ষের জবাব কমিশনের: 

এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি সাংবাদিক বৈঠকে মাইক্রো অবজারভার নিয়োগ নিয়ে কটাক্ষ করেন এবং একাধিক অভিযোগ তোলেন। তার জবাবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যে রাজ্যে যেমন প্রয়োজন হবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 

বারুইপুর পূর্ব ও সোনারপুর দক্ষিণে নতুন করে শুনানির দিন ঘোষণা: 

বারুইপুর পূর্ব ও সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে শুনানির দিন নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে বহু মানুষ ফিরে যেতে বাধ্য হন। এই প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে,

বারুইপুর পূর্বে শুনানি হবে ৩১ ডিসেম্বর,

সোনারপুর দক্ষিণে শুনানি হবে ২৯ ডিসেম্বর।

এই দুই কেন্দ্রে শুনানির সংখ্যা অত্যন্ত বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রেই নোটিশ দেরিতে পৌঁছেছিল বলেই এই পুনর্নির্ধারণ। 

 

নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিন পরেই শুনানি: 

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নোটিশ পাওয়ার অন্তত পাঁচ দিন পর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে, এবং তা হবে নিজ নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দেশিকা অনুযায়ী। কোনও জটিলতা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট ভোটাররা ডিইও (জেলাশাসক) বা সিইও দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। 

 

পরবর্তীতে প্রয়োজনে ফর্ম-৬ পূরণ করে আবেদন বা নতুন করে নাম নথিভুক্তির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগও থাকবে। কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও যোগ্য ভোটারকে বাদ পড়তে দেওয়া হবে না, এবং সমস্যা হলে তার সমাধানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। 

 

প্রথম দিনেই প্রায় এক লক্ষ শুনানি: 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ প্রথম দিনের শুনানি পর্বেই রাজ্য জুড়ে প্রায় এক লক্ষ শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

 

সিইও মনোজ আগরওয়ালের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী: 

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল (IAS)-এর নিরাপত্তায় আজ থেকেই Y+ ক্যাটাগরির কেন্দ্রীয় বাহিনী (১১ জন CISF জওয়ান) মোতায়েন করা হচ্ছে। এই নির্দেশ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জারি করেছে। 

 

এ বিষয়ে রাজ্য সিইও দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনও আলাদা আবেদন করা হয়নি বলেই জানিয়েছে কমিশন।

নাম সংশোধনের জন্য শুনানির প্রয়োজন নেই। যাঁদের নামের বানান বা তথ্যে সামান্য ভুল রয়েছে, তাঁদের শুনানিতে আসার প্রয়োজন নেই। এই সংশোধনের দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট ডিইও তথা জেলাশাসকের ওপর। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই এই মর্মে প্রত্যেক জেলার ডিইও-দের লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছে।

২৫ জানুয়ারির মধ্যে শুনানি শেষ করার চেষ্টার কথা বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই রাজ্য জুড়ে শুনানি পর্ব শেষ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।