আজকাল ওয়েবডেস্ক: মেসিকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শতদ্রু দত্তের জামিনের আবেদন ফের খারিজ করে দিল আদালত। বিচারকের নির্দেশে তাঁকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতেই থাকতে হবে। অভিযুক্তের আইনজীবীর যুক্তি ও পাল্টা বক্তব্য শুনে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই পর্যায়ে জামিন দেওয়া সম্ভব নয়।

আদালতে শতদ্রু দত্তের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা বলেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়েই শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন তাঁর মক্কেল। মাঠের ভেতরের ও বাইরের নিরাপত্তা, জনতা নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সবই পুলিশের দায়িত্বে ছিল। তাঁর দাবি, ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার জন্য আয়োজকদের দায়ী করা যায় না এবং এই গ্রেপ্তারি সম্পূর্ণ বেআইনি।

আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী, টিকিটে উল্লেখ থাকা কোনও ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’ ভাঙা হয়নি। মেসিকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল এবং পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় এনওসি-ও পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশের আবেদনে আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলা হলেও, এটি কোনও পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা নয়, বরং মিস ম্যানেজমেন্টের ফল। তিনি আরও বলেন, দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়নি, তবে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ছিল।

সৌম্যজিৎ রাহা আদালতে জানান, বর্তমানে প্রায় ২২ কোটি টাকা ফ্রিজ করা রয়েছে, ফলে ফান্ড ট্রান্সফার করা সম্ভব নয়। তাঁর দাবি, দেশের অন্য তিন শহরে একই ধরনের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট পেশ করে তিনি জানান, অভিযুক্ত শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এবং সেই কারণেও জামিনের আবেদন করা হচ্ছে। হায়দ্রাবাদ যাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই সেখানে যাচ্ছিলেন শতদ্রু দত্ত। তাঁর মন্তব্য, “২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে, অথচ সিকিউরড রয়েছে ২২ কোটি টাকা। তিন শহরে কোনও সমস্যা হয়নি- আমার মক্কেল এখনও ৩-০ গোলে এগিয়ে।”

এই বক্তব্যের কড়া বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী বিভাষ চ্যাটার্জি আদালতে জানান, বিষয়টি হাইকোর্টে ওঠার পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই তদন্ত চলছে। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও ইতিমধ্যেই যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তাঁর মতে, এই মামলায় এমন ধারাগুলি যুক্ত রয়েছে, যাতে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হতে পারে।

সরকারি পক্ষ জানায়, প্রায় ৩৪,৫৭৬ জন দর্শক ১৯ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের টিকিট কেটেছিলেন। বিশৃঙ্খলার ঘটনায় প্রায় ২ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। অভিযুক্ত যে প্রভাবশালী ব্যক্তি, তা তাঁর কার্যকলাপ থেকেই স্পষ্ট- এয়ারপোর্ট থেকে গ্রপ্তার করার সময় তিনি মেসির বিমানে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলেও দাবি করা হয়।

বিভাষ চ্যাটার্জি আরও বলেন, অভিযুক্ত জামিনে মুক্তি পেলে তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মেডিকেল সমস্যার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হবে বলেও তিনি জানান। তাঁর প্রশ্ন, “যে ব্যক্তি মেসির মতো আন্তর্জাতিক তারকাকে এনে এত বড় অনুষ্ঠান করতে পারেন, তাঁর প্রভাব কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”

পুলিশের তরফে আরও উল্লেখ করা হয়, ফুটবল মাঠে খাবারদাবার সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত সেই সংক্রান্ত চুক্তি করেন। ১২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে চুক্তি হলেও, তার আগেই নভেম্বর মাসে খাবার সরবরাহের চুক্তি হয়েছিল। সরকারি আইনজীবীর প্রশ্ন, “তাহলে উদ্দেশ্য কী ছিল?” এখনও পর্যন্ত ২১ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে বলে আদালতকে জানানো হয়।

সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক স্পষ্ট জানিয়ে দেন- এই পর্যায়ে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া যাবে না। আদালতের মন্তব্য, “শুধু টাকা তোলা হয়েছে, দায় এড়ানো যাবে না।” শেষ পর্যন্ত বিচারকের একলাইনে নির্দেশ দেন জামিন বাতিলের।