আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইতিহাসে নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন চীনের মহারথী মহিলা ডাকাত জেং ইয়ি সাও। মূল নাম চিং শি। ১৭৭৫ সালের আশেপাশে চীনের উপকূলীয় শহর গোয়াংঝুতে জন্ম নেওয়া এই নারী এক সময় সমুদ্রপথের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর ডাকাতদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জানা যায়, জেং ইয়ি সাওর শৈশব ও তার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। তবে তাঁর প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় একটি ভাসমান বর্ডেল বা সমুদ্রপথের যৌনপল্লী। সেখানে কাজ করার সময় তিনি বুদ্ধিমত্তা ও ব্যবসায়িক দক্ষতার জন্য পরিচিতি লাভ করেন।

১৮০১ সালে জেং ইয়ি সাওর বিয়ে হয় চীনের পরিচিত ডাকাত জেং ইয়ির সঙ্গে। এই বিয়ে সম্পর্কের পেছনের প্রেক্ষাপট রহস্যময়। কেউ বলেন, জেং ইয়ি নিজে প্রস্তাব করেছিলেন, আবার কেউ বলেন সাও নিজে তাকে প্রলুব্ধ করেছিলেন। বিয়ের সময়, জেং ইয়ি ইতিমধ্যেই শক্তিশালী ডাকাত ছিলেন। তিনি ছোট ছোট ডাকাত দলের সংহতি ঘটিয়ে ৭০,০০০ জন সদস্যের বিশাল এক ফেডারেশন গড়ে তুলেছিলেন। সাওর যোগদান এবং নেতৃত্বের দক্ষতা এই ফেডারেশনকে আরও সুসংগঠিত করে। ১৮০৭ সালে জেং ইয়ি মারা যাওয়ার পর, সাও তার বহর নিজে পরিচালনা করা শুরু করেন। নিজের বংশধর ও প্রোটেজে জাং বাওকে দ্বিতীয় কমান্ডার নিযুক্ত করেন এবং পরবর্তীতে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

সাওর নেতৃত্ব কৌশল ছিল কঠোর কিন্তু বিচক্ষণ। তিনি একটি বিশেষ কোড প্রবর্তন করেন যা জাহাজের সদস্যদের আনুগত্য নিশ্চিত করতো। যারা সুপারিয়রের নির্দেশ অমান্য করতো, তাদের শাস্তি ছিল অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড। তবে কঠোরতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিশ্চিত করতেন যে ডাকাতরা সন্তুষ্ট থাকবেন। 'শিকার' হওয়া সম্পত্তির ২০% সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হতো এবং বাকি ৮০% রাখার ব্যবস্থা করা হতো কমিউনাল ট্রেজার হিসেবে।

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধ-কাশ্মীর সমস্যাকে এক সারিতে ফেলতে মরিয়া শেহবাজ শরিফ, 'বুদ্ধিহীন' কৌশলে কীসের বার্তা?

তাঁর বহর কেবল ডাকাতি ও লুটপাটের ওপর নির্ভর করত না, জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ফি আদায় করা হতো এবং সরকারি পাসপোর্ট ব্যবস্থা থেকেও রাজস্ব উপার্জন করা হতো। ১৮১০ সালের দিকে চীনা সরকার ও সাওর মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুরুতে সরকার চাইছিল সমস্ত জাহাজ হস্তান্তর করতে, তবে সাওর দক্ষ কূটনীতির ফলে তাঁরা তাদের বহর রাখার অনুমতি পান এবং জাং বাওকে সামরিক বাহিনীতে স্থাপন করা হয়। বাও দ্রুত অগ্রসর হন এবং একজন মর্যাদাপূর্ণ কর্মকর্তা হন।

জেং ইয়ি সাও শেষ জীবনে গ্যাম্বলিং ব্যবসা পরিচালনা করতেন এবং ৬৯ বছর বয়সে ১৮৪৪ সালে মারা যান। যদিও তাঁর নাম অনেকের কাছে অপরিচিত, বিশ্বজনীন জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় পাওয়া গেছে পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান চলচ্চিত্রে ‘মিস্ট্রেস চিন’ চরিত্রে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে। জেং ইয়ি সাও প্রমাণ করেছেন যে নারী শুধুমাত্র সমুদ্রপথের ডাকাতি নয়, বরং নেতৃত্ব, কৌশল এবং সংহতির মাধ্যমে ইতিহাসও গঠন করতে পারেন।