আজকাল ওয়েবডেস্ক: যদি কেউ ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে প্রথমেই মনে আসে আইফেল টাওয়ারের কথা। প্যারিসের শ্যাম্প দে মার্সে অবস্থিত এই ৩৩০ মিটার উঁচু লোহার জাল নকশার টাওয়ার বিশ্বের অন্যতম প্রতীকী স্থাপনা। ফরাসি ভাষায় ‘ল্যা দ্যাম দে ফের’ বা ‘আয়রন লেডি’ নামে পরিচিত এই প্রযুক্তিগত অনবদ্য কীর্তি গাস্টাভ আইফেল ডিজাইন ও নির্মাণ করেছিলেন ১৮৮৭ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে।
প্রথমে এটি কিছু ফরাসি শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে ওঠে। হঠাৎই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে এই আইফেল টাওয়ার। জানা গিয়েছে, ১৩৬ বছরের এই টাওয়ার বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কারণ, সরকারি বাজেট সংক্রান্ত বিক্ষোভ ও খরচ কমানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। শুক্রবার, প্যারিসের প্লেস দ’ইটালিতে হাজার হাজার শ্রমিক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও ছাত্রদের বিক্ষোভ দেখা যায়।
এই কারণে আইফেল টাওয়ার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, ‘স্ট্রাইকের কারণে টাওয়ার বন্ধ আছে, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এই আইকনিক টাওয়ার ধ্বংস করা হতে পারে। তবে SETE, প্যারিস সিটি কর্তৃপক্ষ বা জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থার কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই যা এই তথ্যকে সমর্থন করে। ফলে, এটিকে একপ্রকার গুজব বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া বিক্ষোভগুলো চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজেট নিয়ে তর্ক থেকে উদ্ভূত। বিশেষ করে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির তরফে প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে অনুরোধ করা হয়েছে, আগের সরকারের খসড়া বাজেট প্রস্তাব বাতিল করতে। এতে সামাজিক সুবিধা কমানো ও কঠোর অর্থনৈতিক নীতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করছেন।
এমনকি, শ্রমিক ইউনিয়ন গুলি ধনীদের ওপর কর বাড়ানোরও দাবি তুলেছে। বর্তমানে আইফেল টাওয়ারকে পরিচালনা করছে SETE (Société d’Exploitation de la Tour Eiffel)। জানা গিয়েছে, তারা প্যারিস সিটি হলের সঙ্গে এক প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তির অধীনে টাওয়ার পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইভেন্টের আয়োজন করে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ৬ মিলিয়নের বেশি দর্শক এখানে আসেন। প্রথম দিকে এই টাওয়ারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ছিল। আইফেল যখন প্রথম এটি প্রস্তাব করেন সেই সময় কেবল ২০ বছরের অনুমতি ছিল।
শিল্পী, স্থপতি ও দার্শনিকরা এটিকে ‘ভয়ঙ্কর ও অপ্রয়োজনীয়’ বলেছিলেন। কিন্তু আইফেল নিশ্চিত করেছিলেন, এটির ‘নিজস্ব সৌন্দর্য থাকবে।’ বিজ্ঞানের কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তিনি টাওয়ারের একদম ওপরের অংশ বায়ু সম্পর্কিত গবেষণা ও রেডিও সম্প্রচারের জন্য বেছেছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে, ১৩৬ বছরের ইতিহাসে আইফেল টাওয়ার বহুবার বন্ধ হয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্টে স্ট্রাইকের কারণে দু’দিন বন্ধ ছিল আইফেল টাওয়ার।
২০১৯ সালের মে মাসে একজনকে টাওয়ারে উঠতে দেখা গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে এটিকে খালি করিয়ে দেওয়া হয়। পূর্বের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, বর্তমান শ্রমিক বিক্ষোভ থেমে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টাওয়ার আবার দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হবে। আপাতত কতদিন টাওয়ার বন্ধ থাকবে তাও নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। বন্ধ থাকার সময়কাল সম্পূর্ণভাবে শ্রমবিভাগের সমাধির উপর নির্ভর করছে। টাওয়ার কর্তৃপক্ষ তখন পুনরায় নিয়মিত কার্যক্রম, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ এমনকি দর্শকদের জন্য টাওয়ার খুলে দেব সম্পূর্ণ ভাবে।
