আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসময় বিশ্ববিখ্যাত বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন ওয়াল স্ট্রিট ফিনান্সিয়ার হাওয়ার্ড রুবিন (৭০)- কে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন ফেডারাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ গুরুতর। দীর্ঘ এক দশক ধরে মডেল-সহ একাধিক মহিলাকে লক্ষ্য করে 'কমার্শিয়াল যৌন অ্যাক্ট'-এর ফাঁদে ফেলার অভিযোগ। আর এই কর্মকাণ্ড চলত নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে এক বিলাসবহুল পেন্টহাউসের অন্দরমহলে, যা রীতিমতো একটি 'যৌন অন্ধকূপ'-এ রূপান্তরিত হয়েছিল।

 

শুধু রুবিন নন, তাঁর প্রাক্তন সহকারী জেনিফার পাওয়ার্স (৪৫)- কেও সমানভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এই মামলায়। ফেডারাল কোর্টের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ - এই দশ বছর ধরে যৌন লেনদেনের জন্য মহিলাদের নিয়মিতভাবে নিয়োগ করতেন রুবিন ও পাওয়ার্স। চুক্তিভিত্তিক এই কার্যকলাপের অংশ ছিল চরম মাত্রায় বিকৃত যৌনাচার।

 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চক্র চালাতে রুবিন ও পাওয়ার্স খরচ করেছেন কমপক্ষে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার। নিউ ইয়র্কে ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মূলত এই চক্রের প্রাথমিক পর্ব চলে। পরে, ২০১১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পাওয়ার্সই মহিলাদের নিয়োগ করতেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের সফরের ব্যবস্থা করতেন, থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতেন, এমনকী গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তিপত্রে সই করাতেন।

 

২০১১ তে রুবিন এক বিলাসবহুল পেন্টহাউস ভাড়া নেন। সেন্ট্রাল পার্কের ধারে মেট্রোপলিটন টাওয়ার কন্ডোমিনিয়ামে। ঘরটির ভাড়া মাসে ১৮ হাজার ডলার। অভিযোগ, সেখানেই তৈরি হয় একটি 'সাউন্ডপ্রুফ' ঘর। ঘরে থাকত 'স্ট্র্যাপ ডাউন বেড', শেকল, দড়ি, ধাতব হুক, 'এক্স ক্রস', মুখ ঢাকা মাস্ক, এমনকী পশু নির্যাতনে ব্যবহৃত কিছু অস্ত্রও।

আরও পড়ুন: গোপনে ফাঁকা ঘরে ডেকে নিয়ে চরম নির্যাতন নাবালিকাকে! অভিযুক্ত 'দাদু'র কীর্তি ফাঁস হতেই উত্তপ্ত এলাকাবাসী 

এক ইমেলের হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যেখানে পাওয়ার্স লিখছেন," ক্রস-এর চার কোণ এবং বেডের চার কোণে শেকল লাগিয়ে রেখেছি। প্রতিটি শেকলের শেষে হাতকড়া। যাতে খুব সহজেই কাউকে বেঁধে ফেলা যায়।"

আরও পড়ুন: ঘর থেকে অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার! 'অস্বাভাবিক যৌন চাহিদা'র অভিযোগে গ্রেপ্তার ৬১- এর প্রৌঢ়, জানাজানি হতেই হুলুস্থুল 

এখানেই শেষ নয়। এক নির্যাতিতার স্তনের ইমপ্লান্ট পর্যন্ত উল্টে গিয়েছিল নির্যাতনের জেরে। জানা গিয়েছে এরপর অস্ত্রোপচার করতে হয় যুবতীকে। নির্যাতিতাদের শরীরে দাগ, যন্ত্রণা চলত সপ্তাহের পর সপ্তাহ। অভিযোগ, পাওয়ার্স তাঁদের বরফ বা ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন এবং রুবিনের এহেন হিংস্র ব্যবহারের জন্য তাঁদেরই দোষারোপ করে বলতেন, "তোমরা ওকে মদ খেতে দিলে কেন?"। জানা গিয়েছে, নির্যাতিতাদের কিছু ক্ষেত্রে এতটাই শক্ত করে বেঁধে রাখা হত যে, প্রতিবাদ করার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলতেন তাঁরা।

 

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নির্যাতিতাদের লক্ষ্য করা হয়েছিল বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, মডেলিং প্ল্যাটফর্ম - এর মাধ্যমে। অভিযোগ, তাঁদের কাছে রুবিনের এহেন আগ্রাসী ও হিংস্র যৌন প্রবণতার বিষয়টি 'মিথ্যে বা আংশিক' তথ্য দিয়ে ঢেকে রাখা হত।

 

বর্তমানে রুবিন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন৷ জামিন খারিজ হয়েছে। অন্যদিকে, পাওয়ার্স মুক্তি পেয়েছেন ৮,৫০,০০০ ডলারের বিনিময়ে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দু'জনেরই ন্যূনতম ১৫ বছরের জেল হতে পারে - এমনকী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আইনজীবীরা।