আজকাল ওয়েবডেস্ক: বন্যাকবলিত শ্রীলঙ্কার পাশে থাকতে গিয়ে উল্টো চরম বিড়ম্বনায় পড়ল পাকিস্তান। কলম্বো অভিমুখী পাকিস্তানের ত্রাণবাহী কার্গো থেকে এমন সব ছবি সামনে এসেছে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—প্যাকেজগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এই ছবিগুলো পাকিস্তানের হাইকমিশন নিজেই সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করে, আর পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে।
হাইকমিশন যখন পোস্ট করে, তখন লিখেছিল, “সবসময় একসঙ্গে—পাকিস্তান আজ এবং সবসময় শ্রীলঙ্কার পাশে।” কিন্তু সেই বার্তা মুহূর্তেই ছাপিয়ে যায় তোলা ছবিগুলো। অনেক প্যাকেটে দেখা যায় স্পষ্ট লেখা—“EXP: 10/2024”, অর্থাৎ অক্টোবর ২০২৪-এর আগে পর্যন্ত বৈধ। অর্থাৎ এসব সামগ্রী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ারও এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে।
ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন—প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পাকিস্তান কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী পাঠায়? আরও বিস্ময়ের বিষয়, হাইকমিশন নিজেরাই কেন এমন প্যাকেটের ছবি পোস্ট করল, তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।
ভারতের বৃহৎ মানবিক সাহায্য—‘অপারেশন সাগর বন্ধু’
পাকিস্তান যেখানে বিতর্কে জর্জরিত, সেখানে ভারত শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছে ব্যাপক মানবিক উদ্যোগ নিয়ে। সাইক্লোন ‘দিতওয়া’–র পর ভয়াবহ বন্যা, প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ভারত শুরু করেছে ‘অপারেশন সাগর বন্ধু’, যার মাধ্যমে ২৮ নভেম্বর থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে ৫৩ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
বিশেষ করে, শ্রীলঙ্কায় আটকে পড়া ২,০০০-র বেশি ভারতীয়কে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উদ্ধার ও অনুসন্ধানে এনডিআরএফের দলগুলো এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ১৫০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আইএএফের পরিবহন বিমান এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ—আইএনএস বিক্রান্ত, আইএনএস উদয়গিরি ও আইএনএস সুকন্যা—ত্রাণ সরবরাহ করছে লাগাতার। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর নিজেও ‘এক্স’-এ আইএনএস সুকন্যার শ্রীলঙ্কা পৌঁছনোর ছবি শেয়ার করেছেন।
শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে আইএনএস বিক্রান্তের চেতক হেলিকপ্টার এবং আইএএফের এমআই-১৭ হেলিকপ্টার গুরুতর পরিস্থিতিতে আটকে পড়া নাগরিকদের এয়ারলিফট করে। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন—শ্রীলঙ্কা, ভারত, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, পোল্যান্ড, বেলারুশ, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নাগরিক।
ভারত প্রথম ধাপে ৯.৫ টন জরুরি খাদ্যসামগ্রী পাঠায় নৌবাহিনীর দুই জাহাজে।
এরপর আসে—
আইএএফের মাধ্যমে ৩১.৫ টন ত্রাণ—টেন্ট, ত্রিপল, কম্বল, ওষুধ, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, সার্জিক্যাল কিট এবং দুইটি BHISHM মেডিক্যাল কিউব
৮০ সদস্যের এনডিআরএফ নগর অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল
আইএনএস সুকন্যা থেকে আরও ১২ টন ত্রাণ
সি-১৩০জে ও আইএল-৭৬ বিমানে ভারতীয়দের টানা উদ্ধার অভিযান
একদিকে পাকিস্তানের পাঠানো ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ সামগ্রী নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে; অন্যদিকে ভারত দ্রুত, সমন্বিত ও বড়সড় মানবিক সাহায্যের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার পাশে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হিসেবে উঠে এসেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কঠিন সময়ে—এই দুই দেশের প্রতিক্রিয়া নিছক কূটনৈতিক পার্থক্য নয়, বরং মানবিক দায়িত্ববোধেরও স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
