আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত এবং মার্কিন মুলুক। দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে যেমন চর্চা, তেমনই চর্চা এক দেশের উপর অন্য দেশের ক্রমাগত শুল্ক আরোপ, শুল্ক-হুঁশিয়ারি নিয়েও। এসবের মাঝেই বড় তথ্য এল সামনে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৃষিক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সাম্প্রতিক সময়ে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন যে, শস্য- জোয়ার এবং সয়া-সহ আমেরিকান কৃষিপণ্যের বাজার প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নয়াদিল্লির সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমেরিকান দ্রব্যাদির বাজার হিসেবে ভারতের থেকে ভাল কোনও দেশকে পাচ্ছে না মার্কিন মুলুক।
মঙ্গলবার সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস সাবকমিটির শুনানিতে নিজের বক্তব্য রাখার সময় গ্রিয়ার বলেন, ইউএসটিআর-এর একটি দল বর্তমানে নয়াদিল্লিতে। সেখানেই আলোচনা চলছে কৃষিজাত পণ্যের বাজার নিয়ে। ভারতের বাজারে সকল আমেরিকান শষ্যের চাহিদা যেমন ততটাও নজরকাড়া নয়, তবে এই কৃষিজাত দ্রব্যাদির বাণিজ্য হিসেবে ভারতের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবগুলির থেকে মার্কিন মুলুক আদতে অপর কোনও দেশ থেকে, আরও ভাল, সদর্থক প্রস্তাব যে পায়নি, তাও স্পষ্ট গ্রিয়ারের মন্তব্যে।
মার্কিন পণ্যের বাজার হিসেব আমেরিকার জন্য এক সময়ে উল্লেখযোগ্য ছিল চীনের বাজারও। তবে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে, সাম্প্রতিককালে তা খুব একটা আশার আলো দেখাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে, সে দেশের পণ্যের জন্য বিকল্প বাজারের খোঁজ অবশ্যম্ভাবী। এই প্রসঙ্গেই গ্রিয়ার জানিয়েছেন,ভারতই এই মুহূর্তের মার্কিন পণ্যের জন্য বিকল্প বাজার হয়ে উঠতে পারে।
যদিও এই প্রসঙ্গে কমিটির মধ্যে বেশ মতানৈক্য রয়েছে বলেও তথ্য। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, কমিটির সভাপতি জেরি মোরান সে দেশের কৃষকদের দুরাবস্থা দূর করতে, এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে চীনের উপর পণ্য নির্ভরতা কমাতে গ্রিয়ারের উপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করেন। সেখানে গ্রিয়ার বিকল্প বাজার হিসেবে ভারতের নাম প্রস্তব করলে মোরান প্রশ্নও তোলেন, এই যুক্তি কতটা ঠিক, সে বিষয়ে। তথ্য, গ্রিয়ার নিজের যুক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে সাফ জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ এর আগের সরকারের সময়কালের তুলনায় ট্রাম্প-জমানায় অনেক বেশি সুসংহত, গতিশীল।
মঙ্গলবারের আলোচনাতেই গ্রিয়ার জানান, মার্কিন মুলুক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এমনকী ইউরোপের মতো জায়গায়, সারা বিশ্বে বাজার অ্যাক্সেসের পথ খুলেছে। তাঁর যুক্তি,ভারতের মতো প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে ওয়াশিংটন কাজ করলে, তাতে লাভ হবে সে দেশের কৃষকদেরই।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের গলায় বারবার শোনা গিয়েছে, অন্যান্য দেশ থেকে ক্রমাগত কৃষিজাত পণ্য বেশি দামে আমদানির পরিবর্তে, দেশের কৃষকদের ভিত মজবুত করার দিকে নজর দেওয়ার বিষয়ে। তিনি কৃষি এবং কৃষকদের আমেরিকার মেরুদণ্ড বলেছেন। এবং তিনি এই ব্যবহার-ভিত আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। মার্কিন কৃষি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু যে শুল্ক, ট্রাম্প তাও বুঝিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে। প্রয়োজনে ভারত থেকে সে দেশে রপ্তানি করা চালের উপর শুল্ক চাপাতে পিছপা হবেন না, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন। স্থানীয় উৎপাদনকে আরও বেশি উৎসাহিত করার জন্য তিনি কানাডা থেকে আসা সারের উপর সম্ভাব্য শুল্ক ব্যবস্থার পরামর্শও দিয়েছিলেন। সার প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, 'এর বেশিরভাগই কানাডা থেকে আসে, এবং তাই যদি আমাদের প্রয়োজন হয় তবে আমরা এর উপর খুব কঠোর শুল্ক আরোপ করব।'
তবে মার্কিন মুলুক যেহারে একাধিক বিষয়ে ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করেছে, তা এই বিষয়ের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও মত গ্রিয়ারের। ১৯৭৯ সালের বিমান চুক্তির অধীনে বেসামরিক বিমান চলাচলের যন্ত্রাংশের জন্য জিরো ট্যারিফ অর্থাৎ শূন্য-শুল্ক প্রতিশ্রুতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, আলোচনায় তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে আলোচনা 'বেশ এগিয়েছে'। মোটের উপর, ভারত যে মার্কিন মুলুকের ধসে যাওয়া কৃষি পণ্যের জন্য বিকল্প বাজার হয়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে জোর সওয়াল করেছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত এক দশকে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে, দুই সরকার কৃষি, ডিজিটাল পরিষেবা, বিমান চলাচল, ওষুধ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বাজার অ্যাক্সেস নিয়ে আলোচনা করছে। সূত্রের খবর, ওই আলোচনায় অনেকেই ভারতকে আমেরিকান পণ্যের 'ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন' হিসবে মেনেও নিয়েছেন।
