আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজায় নতুন সামরিক অভিযানের মধ্যে ইজরায়েল দাবি করেছে, হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র ও শীর্ষ কমান্ডার আবু উবায়দা নিহত হয়েছেন। রোববার ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল ক্যাটজ এ দাবি জানান। আবু উবায়দার সর্বশেষ প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল শুক্রবার, যখন তিনি গাজা সিটিকে যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করে বিবৃতি দেন। এরপর আর তাঁর কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই জানিয়েছিলেন যে, ইজরায়েলি বাহিনী উবায়দাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, তবে তিনি তখন নিশ্চিত ছিলেন না উবায়দা নিহত হয়েছেন কি না। রবিবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের পক্ষ থেকে এখনো কোনও  প্রতিক্রিয়া আসেনি, যা অত্যন্ত  ইঙ্গিতবহ। দীর্ঘদিন ধরে হামাসের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত আবু উবায়দা ছিলেন সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব। গত দুই বছরে ইজরায়েলি হামলায় হামাসের প্রায় সব শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন, উবায়দা ছিলেন তাদের মধ্যে শেষদিককার একজন।

এদিকে স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, শনিবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জন প্যালেস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সবচেয়ে বড় শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের মর্গে ২৯টি মৃতদেহ আনা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ জন খাদ্যসাহায্য সংগ্রহের সময় নিহত হন। রবিবার সকালে আরও ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। আল-আউদা হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে সাতজন সাধারণ নাগরিক, যারা ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজার কেন্দ্র দিয়ে যাওয়া নেটজারিম করিডরে খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া মানুষদের ওপর ইজরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছে। নুসেইরাত শিবিরের বাসিন্দা রাগেব আবু লেবদা বলেন, “আমরা খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের সামনে গুলি চালানো হয়। অন্তত তিনজনকে আমি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। ওটা আসলে এক মৃত্যু ফাঁদ।”

ইজরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্যাটজ বলেন, হামাসের সামরিক ক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। তবে হামাস এখনো আবু উবায়দার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি। বিশ্লেষকদের মতে, সংগঠনটি বড় ধাক্কা খেলেও তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইছে না। গাজা সিটিতে লড়াই অব্যাহত আছে, আর সাধারণ মানুষ খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার সংকটে মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

আরও পড়ুন: '২০৮ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে', জিনপিং-এর সঙ্গে দেখা হতেই কীসের কথা বললেন মোদি?

গাজায় চলমান এই সংঘাত ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইজরায়েলের দাবি অনুযায়ী আবু উবায়দার মৃত্যু হামাসের জন্য বড় আঘাত হলেও, এর মূল চাপ পড়ছে সাধারণ প্যালেস্তিনি জনগণের ওপর। প্রতিদিনই তারা বোমা, গুলি আর ক্ষুধার মধ্যে জীবন বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা সিটির বহু এলাকায় এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ, ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি আর শোকার্ত পরিবার। হাসপাতালগুলোতে ভিড় বেড়েই চলেছে, অথচ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর সমাধানের ইঙ্গিত নেই। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডর তৈরির আহ্বান জানালেও, ময়দানের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। খাদ্য, জল, জ্বালানি ও ওষুধ—সবকিছুর অভাবে সাধারণ মানুষ অসহায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অবস্থা ভয়াবহ। শরণার্থী শিবিরগুলোতে জনসমাগম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মৌলিক চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।

ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা হামাসকে চূড়ান্তভাবে দুর্বল না করা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে। অন্যদিকে হামাসের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। যুদ্ধের এই ভয়াবহ বাস্তবতায় প্যালেস্তাইনের সাধারণ মানুষই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় শিকার, আর আন্তর্জাতিক অঙ্গন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তাদের দুর্দশা লাঘবে বাস্তব পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়।