আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি অত্যাধুনিক অনলাইন প্রতারণার শিকার হলেন সিঙ্গাপুরের ৬৮ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়। ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে এক মহিলার আবদার মেটাতে গিয়ে তিনি খুইয়েছেন প্রায় ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬ লক্ষ টাকা)। অভিনব এই জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয়েছে কিউআর কোড।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের আগস্ট মাসে। অবসর জীবনে একাকীত্ব কাটাতে ফেসবুকে অনেকখানি সময় কাটাতেন এনজি নামে ওই ব্যক্তি। সেই সময়েই 'লি সিন' নামের এক সুন্দরী মহিলার প্রোফাইল থেকে তাঁর কাছে বন্ধুত্বের অনুরোধ আসে। আলাপ গড়াতেই কথাবার্তা শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপে। মিষ্টি কথায় মন ভুলিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই এনজিকে প্রেমের জালে জড়ান ওই মহিলা।
এরপর ধীরে ধীরে প্রতারণার জাল বোনা হয় অত্যন্ত কৌশলে। 'লি সিন' নিজেকে চিনের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। সে জানায়, সিঙ্গাপুরে এসে এনজির সঙ্গে দেখা করতে চায় সে। কিন্তু অতীতে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকায় তার সিঙ্গাপুরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এর পরেই দ্বিতীয় দফার নাটক শুরু। 'শাখা প্রধান ওয়াং' নামে চিনের বাসিন্দার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি এনজির সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে আশ্বাস দেয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে লি সিনের সিঙ্গাপুরে আসার ব্যবস্থা করে দেবে। টাকা পাঠানোর জন্য এনজিকে একটি কিউআর কোড পাঠানো হয়, যা স্ক্যান করে টাকা পাঠান তিনি।
প্রথম সপ্তাহেই একাধিক নতুন অজুহাত দেখিয়ে আরও টাকার জন্য বেশ কয়েকটি কিউআর কোড পাঠানো হয়। সেপ্টেম্বরে লি সিন বিমানবন্দরে পৌঁছনোর ছবি পাঠিয়ে দাবি করে, অতিরিক্ত গয়না থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে এবং ছাড়ানোর জন্য আরও টাকা লাগবে। 'প্রেমিকা'কে বিশ্বাস করে চিনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত কিউআর কোড স্ক্যান করে হাজার হাজার ডলার পাঠান তিনি। এখানেই শেষ নয়। এর পর গাড়ি দুর্ঘটনার অজুহাত দিয়ে চিকিৎসার খরচের জন্যও টাকা চাওয়া হয়, কিন্তু লি সিন কোথায় আছে, তা জানানো হয়নি এনজিকে।
এনজি তখনও বিশ্বাস করছিলেন যে, এটি একটি সত্যিকারের প্রেমের সম্পর্ক। অবশেষে অক্টোবরের শুরুতে যখন দেখা করার সমস্ত আর্জি অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যেতে থাকে 'প্রেমিকা', তখনই সন্দেহ হয় তাঁর। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামার পরেই পুরো প্রতারণা চক্রটির পর্দাফাঁস হয়।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি থেকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। একাকিত্বে ভোগা বয়স্ক মানুষেরা অনলাইন সম্পর্কে কতটা অসুরক্ষিত, তা নিয়েও দাবি করেছেন অনেক নেটিজেন। অর্থ থাকলেও সঙ্গীর অভাবে তাঁরা সহজেই এই ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
