আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটি সময় কাতার বলতে ছিল শুধু মরুভূমি। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু বালি। বসবাসের অযোগ্য একটি দেশ। জলের আকাল, গাছপালা প্রায় নেই বললেই চলে। দেশটির নিজস্ব সম্পদ বলতেও কিছু ছিল না। তারপর, ১৯৩৯ সালে, দুখান অঞ্চলে তেল আবিষ্কৃত হয়, যা সবকিছু বদলে দেয়। তেল, যাকে প্রায়শই ‘কালো সোনা’ বলা হয়, দেশটির জন্য নগদ অর্থের দ্বার খুলে দেয়। এর পর যত সময় গড়িয়েছে কাতার এই সম্পদকে আধুনিক শহর নির্মাণ, তার জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি এবং নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত করার জন্য ব্যবহার করে।
কাতার পারস্য উপসাগরের একটি দেশ। এটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত কাতার উপদ্বীপে অবস্থিত। কাতারের দক্ষিণে সৌদি আরব, এবং এর পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের মত কাতারও একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। এখানে ভূ-পৃষ্ঠস্থ কোনA জলাশয় নেই এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যাও যৎসামান্য। বেশির ভাগ লোক শহরে, বিশেষত রাজধানী দোহায় বাস করেন। দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ আছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
আরও পড়ুন: যত রাগ কি ভারতের উপরেই, ট্রাম্প কেন ভারতকে উচ্চ শুল্ক দিয়ে নিশানা করছেন, তিনটি কারণ
১৯৩৯ সালে কাতারের দুখানে প্রথম তেল আবিষ্কৃত হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত উৎপাদনের গতি ছিল যথেষ্ট কম। এরপরেই উৎপাদনে গতি আসে এবং কাতার দ্রুত বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটিতে পরিণত হয়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাতারের মোট ২৮ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় সাত থেকে আট লক্ষ ভারতীয়। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ভারতীয় কর্মী, আইটি বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার এবং ব্যবসায়ীরা এই জনসংখ্যার প্রধান অংশ। এর একটি সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ দোহা। এতে রয়েছে অসাধারণ মল, পাঁচ তারা হোটেল এবং সুন্দর সৈকত। সৌক ওয়াকিফ, ইসলামিক শিল্প জাদুঘর এবং কাটারা সাংস্কৃতিক গ্রাম কাতারের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কয়েকটি অনন্য উদাহরণ।

১৯৭১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে কাতার স্বাধীনতা লাভ করে। শীঘ্রই এটি আধুনিকীকরণে জোর দেয়। এটি এখন মধ্যপ্রাচ্যের একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি এবং এর জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উচ্চ। এর অর্থনীতির ৭০ শতাংশ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা গঠিত। কাতার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক এবং ভারতের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
কাতারে ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্য স্কুল, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভারতীয় মুদির দোকান রয়েছে। হিজাব পরা বাধ্যতামূলক নয় এবং মহিলাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি রয়েছে। রমজান এবং ঈদের পাশাপাশি, দীপাবলি এবং হোলির মতো ভারতীয় উৎসবগুলিও কাতারে উদযাপিত হয়।
জনসাধারণের জন্য প্রকাশ্যে মদ্যপান নিষিদ্ধ এবং রমজানের দিনে খাওয়া বা পান করাও নিষিদ্ধ। শালীন পোশাক পরা বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য। মাদক, নেশা এবং ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ম প্রযোজ্য।
কাতার ভারতের বৃহত্তম এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহকারী। কাতারের সঙ্গে ভারত বাণিজ্য, স্টার্টআপ, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভারতে কাতারি সংস্থাগুলির বিনিয়োগও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
