আজকাল ওয়েবডেস্ক: একাধিক মামলায়, সাজা ফাঁসি। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সোমবার পাঁচ মামলায় ফাঁসির সাজা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হাসিনার সঙ্গেই, ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে ওপার বাংলার প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে। পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন'কে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পরেই, বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার বিবৃতি জারি করে, এই রায়কে 'ঐতিহাসিক' বলেছে।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে- মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায়।
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে,'সমাজমাধ্যমে এই রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে অন্তবর্তীকালীন সরকার সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। রায়- পরবর্তী সময়ে কোনও ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, হিংসা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায়কে ঘিরে জনমনে স্বাভাবিক ভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে, সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কোনও পদক্ষেপ না করে-সরকার এ বিষয়ে দৃঢ় ভাবে সবাইকে সতর্ক করছে। সরকার আরও স্পষ্ট করে জানাচ্ছে, যে কোনও ধরনের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বা জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা কঠোর ভাবে দমন করা হবে।'
অন্যদিকে, মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খোদ হাসিনা। তাঁর অভিযোগ, এই রায় এসেছে ‘একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত রিগড ট্রাইব্যুনাল’ থেকে, যার মূল লক্ষ্য তাঁর দল আওয়ামী লিগকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দুর্বল করে দেওয়া।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরপরই প্রকাশিত বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহম্মদ ইউনুসের বিশৃঙ্খল, সহিংস, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে দেওয়া প্রশাসন কোটি কোটি বাংলাদেশিকে কোনওভাবেই বোকা বানাতে পারবে না। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা তারা বুঝে গিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার পরিচালনা করেছে, তার কখনওই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য ছিল না। এমনকী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে প্রকৃত সত্য উদঘাটনেরও কোনও চেষ্টা করেনি ট্রাইব্যুনাল।’
উল্লেখ্য, সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার তাঁর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর মেয়ের ফাঁসি, বাংলাদেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা দায়ের হয়েছিল।
সোমবার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করল। এই রায় ছিল মোট ৪৫৩ পাতার। রায়ের মোট ছ'টি অংশ ছিল। ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ের শেষ অংশ পড়ে শোনান।
