আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে শিশু চুরির অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মহিলা নিজেকে ওই সরকারি হাসপাতালের নার্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে মঞ্জিলা খাতুন নামে এক মহিলার থেকে তাঁর শিশুকে চুরি করে নিয়ে যায় বলে শিশুর মায়ের অভিযোগ। এই ঘটনা জানাজানি হলে হাসপাতাল চত্তরের অন্যান্য রোগী ও তাঁদের পরিজনরা যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। যদিও এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেননি। অবশেষে বাচ্চা-সহ অভিযুক্ত মহিলার খোঁজ পেল ভাঙড় থানার পুলিশ। মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ এক প্রতিবেশীর সঙ্গে সন্তানের চিকিৎসা করাতে বি সি রায় হাসপাতালে আসছিলেন মঞ্জিলা। তিনি উত্তর কাশীপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। বাসে অত্যাধিক ভিড় হওয়ায় দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। তিনি তখন বাচ্চাকে এক সহযাত্রী মহিলার কোলে দেন। ক্রমে আলাপ হলে মঞ্জিলা জানতে পারেন ওই মহিলা বি সি রায় হাসপাতালেরই নার্স। দু’জনেই বিধাননগরে নামেন। নার্স পরিচয় দেওয়া মহিলাটি বাসের ভাড়া পর্যন্ত মিটিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে অটোতে করে মঞ্জিলার সঙ্গেই হাসপাতালে আসে। সেখানে বাচ্চার চিকিৎসা করানোর পর মঞ্জিলা ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় ওই মহিলা তাঁর কোলে বাচ্চাটিকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ওই 'ভুয়ো' নার্স মঞ্জিলাকে জানায়, বাচ্চাকে নিয়ে ভিড়ে দাঁড়াতে পারবেন না। ভরসা করে বাচ্চাকে ওই মহিলার হাতে তুলে দিয়ে বাইরে ওষুধ কিনতে যান মঞ্জিলা। এরপর ওষুধ কিনে ফিরে দেখেন সেই মহিলা এবং বাচ্চা কেউই নেই। এরপরই আকুল হয়ে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। জানানো হয় বিধানচন্দ্র রায় হাসপাতালের পুলিশের আউট পোস্টে। সেখান থেকে ফুলবাগান থানায় খবর গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাচ্চাটির মা বিশ্বাস করে ওই মহিলার হাতে দিয়ে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। তারপরে ফিরে এসে দেখেন ওই মহিলা এবং বাচ্চা দু’জনেই নেই। এবিষয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে এক মহিলা বলেন, “ভাবতেই পারি না এখান থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যাবে।”
বাচ্চার মা মঞ্জিলা খাতুন বলেন, “ওই মহিলা নিজেকে নার্স হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল এবং বলেছিল সে এই হাসপাতালেরই নার্স। আমি তাই ভরসা করে তাঁর হাতে দিয়ে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি সেই মহিলা এবং বাচ্চা কেউ নেই। বাসেও একসাথে আসি এবং বাসে যখন আমি বাচ্চাকে ওর কোলে দিয়েছিলাম তখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপর বাস থেকে বিধাননগরে নেমে সেখান থেকে অটো করে হাসপাতালে আসি। আমি ভাবতে পারিনি এরকম ঘটনা ঘটবে। মানুষকে বিশ্বাস করে আজকে আমার এই অবস্থা হল। পুলিশের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ দয়া করে আমার বাচ্চাকে খুঁজে দিন।"
পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্ত মহিলাকে দেখা গিয়েছে। অভিযুক্ত আদতে ওই হাসপাতালের নার্সই নয়। শিয়ালদহ পর্যন্ত তাঁর অবস্থান মিলেছে। তবে সিসিটিভি ফুটেজের কিছু অংশে দুর্বল থাকার কারণে বা না থাকার ফলে তদন্ত করতে পুলিশের একটু বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। খুব শীঘ্রই বাচ্চাটিকে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারবে বলে কলকাতা পুলিশ আশাবাদী।
পরিবার সূত্রে খবর, এই বিষয়ে হাসপাতালের তরফ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঘটনাটি হাসপাতালের বাইরে হয়েছে।
সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির অভিযোগ উঠতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এক মহিলাকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শেষ পর্যন্ত উত্তর কাশীপুর থানার সহযোগিতায় ভাঙড়ের নিবুন্ধিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে শ্যামলী মণ্ডল নামে এক গৃহবধূকে।
শিশু চুরির অভিযোগের ভিত্তিতে ফুলবাগান থানার পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা আশপাশের একাধিক থানায় পাঠানো হয়। ফুটেজ দেখে শিশু-সহ পালিয়ে যাওয়া মহিলাকে শনাক্ত করা হয়। সেই ফুটেজ উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পারে শ্যামলী মণ্ডল নামে এক মহিলা একটি শিশু নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তৎক্ষণাৎ পুলিশ নিবুন্ধিয়া গ্রামে অভিযান চালায়। শ্যামলীর বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই অভিযুক্ত শ্যামলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামলী কেন শিশুটিকে চুরি করেছিলেন তা জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পরিবার, পুলিশ এবং স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটি উদ্ধার হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শিশুটির বাবা-মা।
