আজকাল ওয়েবডেস্ক: রিইউনিয়ন দ্বীপের আকাশে সম্প্রতি ধরা পড়েছে এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। এক অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার ক্যামেরাবন্দী করেছেন দুটি ধূমকেতুকে, যারা যেন পাশাপাশি দৌড় প্রতিযোগিতায় মেতেছে রাতের আকাশে। ছবিটি শেয়ার হওয়ার পর থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।


এই বিরল ছবিতে দেখা যায় ধূমকেতু C/2025 K1 ATLAS এবং C/2025 R2 SWAN—দুটি উজ্জ্বল আলোর রেখা টেনে পৃথিবীর কাছ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে। তাদের এমন পাশাপাশি উপস্থিতি কেবলই দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।


সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এদের একজন—C/2025 K1 ATLAS—আমাদের সৌরজগতের বাইরের অতিথি। এটি একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু, যার উৎস অন্য কোনও নক্ষত্রমণ্ডল। এর গতিপথ সৌরজগতের স্থানীয় ধূমকেতুর তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যদিকে C/2025 R2 SWAN সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাবে আবদ্ধ একটি স্থানীয় ধূমকেতু, যা নিয়মিতভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।


তবু, পৃথিবী থেকে দেখা সেই ছবিতে দুটি ধূমকেতু পাশাপাশি অবস্থান করছে, যেন মহাশূন্যে তারা প্রতিযোগিতা করছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের কক্ষপথ ও গতি একেবারেই ভিন্ন হলেও পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমান্তরাল উপস্থিতি তৈরি করেছে এক অভিনব দৃশ্য।

আরও পড়ুন: মহাকাশ থেকে ধরা দিল পৃথিবীর শিরা-উপশিরার ছবি, নজর কাড়ল সকলের


ছবিতে বামদিকে ধরা পড়েছে ATLAS এবং ডানদিকে SWAN। উভয়েরই রয়েছে উজ্জ্বল কোমা এবং সূর্যের আলোয় আলোকিত বিশিষ্ট লেজ। এমন সমান্তরাল অবস্থান খুবই বিরল, কারণ ধূমকেতুগুলি সাধারণত উপবৃত্তাকার বা অতিবৃত্তাকার পথে চলে এবং সূর্য ও গ্রহগুলির মহাকর্ষীয় প্রভাবে তাদের গতিপথ নির্ধারিত হয়।


বিজ্ঞানীদের জন্য ATLAS এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। যেহেতু এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের, তাই এর গঠন ও আচরণ অধ্যয়ন করে জানা সম্ভব, অন্য নক্ষত্রের চারপাশে গঠিত বস্তুগুলির বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে। এটি আন্তঃনাক্ষত্রিক পদার্থের রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।


অন্যদিকে SWAN-এর নাম এসেছে Solar Wind ANisotropies নামের একটি যন্ত্র থেকে, যা প্রথম এই ধূমকেতুকে শনাক্ত করেছিল। এটি সৌরজগতের পরিচিত ধূমকেতুদের মতোই নিয়মিতভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এবং সময়ে সময়ে পৃথিবীর কাছ দিয়ে দৃশ্যমান হয়।
রিইউনিয়ন দ্বীপের পরিষ্কার ও অন্ধকার আকাশ এই বিরল মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছিল। এই ধরনের দৃশ্য বন্দী করতে আবহাওয়া, আলো দূষণ এবং যন্ত্রপাতির মান সব মিলিয়ে নিখুঁত সমন্বয় দরকার হয়।


এই দ্বৈত ধূমকেতু প্রদর্শনী শুধু অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফারদের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই এক বিরল মহাজাগতিক উপহার। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মহাকাশ ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, গতিশীল এবং বিস্ময়কর ঘটনায় ভরপুর।


ধূমকেতু দু’টি যদিও ছবিতে পাশাপাশি দেখা গেছে, বাস্তবে তাদের গতিপথ সম্পূর্ণ আলাদা। ATLAS অতিবৃত্তাকার পথে ছুটছে, যা প্রমাণ করে এটি সূর্যের মহাকর্ষের বাইরে থেকে এসেছে। আর SWAN সূর্যের আবদ্ধ কক্ষপথে ঘুরছে, যা একে আমাদের সৌর পরিবারের নিয়মিত সদস্যে পরিণত করেছে।


পৃথিবীর আকাশে এই ক্ষণস্থায়ী প্রদর্শনী তাই কেবল এক চমকপ্রদ দৃশ্য নয়, বরং আমাদের মহাবিশ্বের বৈচিত্র্য ও রহস্যময়তাকে নতুন করে অনুভব করার সুযোগ। যারা পরিষ্কার রাতের আকাশে তাকাতে পারবেন, তারা হয়তো নিজের চোখেই দেখতে পাবেন এই প্রাচীন ভ্রমণকারীদের—যারা সময়ের বুকে ক্ষণিকের জন্য আমাদের আকাশে আঁকছে উজ্জ্বল রেখা।