আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার জানান যে তাঁর আসন্ন নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারতীয় আমদানি বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, গত তিন বছরে ভারত ও চীনের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং মস্কো এই সহযোগিতা আরও গভীর করতে চায়।


পুতিন পশ্চিমের দেশগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, ইউরোপ কূটনীতি পরিত্যাগ করেছে এবং যুদ্ধমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, “ইউরোপ যদি যুদ্ধ চায়, আমরা প্রস্তুত।” পুতিন দাবি করেন, পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের “একচেটিয়া আধিপত্য” ব্যবহার করে অন্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, কিন্তু তারা এতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।


তিনি আরও বলেন, রাশিয়া তার নিজস্ব জাতীয় অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করবে। “আমরা সার্বভৌম অর্থনৈতিক পথেই এগোব,” পুতিন ঘোষণা করেন।
তার সফরকে ঘিরে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ভারত–রাশিয়া বাণিজ্যে যে বিপুল ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা কমানোর উপায় নিয়ে মস্কো কাজ করছে। বর্তমানে ভারত রাশিয়া থেকে বছরে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও পরিষেবা আমদানি করে, কিন্তু রাশিয়া ভারতের কাছ থেকে কিনছে মাত্র প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। পেসকভ বলেন, “আমরা ভারতের কাছ থেকে আরও বেশি কিনতে চাই।”


পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য ভারতের রুশ তেল আমদানিতে প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন, তবে রাশিয়া সরবরাহ বজায় রাখার উপায় খুঁজে পাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “নিষেধাজ্ঞা আমাদের নতুন নয়; আমরা এই ধরনের চাপ মোকাবিলায় অভিজ্ঞ।”


তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত–রাশিয়া বাণিজ্যকে তৃতীয় দেশের প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করা জরুরি। এজন্য রুপি–রুবল বা অন্যান্য জাতীয় মুদ্রায় লেনদেনের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ভারতকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে, এবং রাশিয়া সেই বাস্তবতা বুঝতে পারছে।


প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। পেসকভ জানান, ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের যৌথ উৎপাদন আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। পাশাপাশি Su-57 যুদ্ধবিমান, অতিরিক্ত S-400 প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ছোট মডুলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দেন তিনি। রাশিয়া এসব রিঅ্যাক্টরের প্রযুক্তি সরবরাহ করতে প্রস্তুত।


ভারত–চীন সম্পর্কে তিনি বলেন, মস্কো দুই দেশের সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করে এবং আশা করে যে তারা আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করবে। রাশিয়া ভারতের সঙ্গে এমন গভীর সম্পর্ক চায়, যেমনটি তারা চীনের সঙ্গে তৈরি করেছে। তাঁর কথায়, “ভারত যতদূর যেতে চাইবে, রাশিয়া ততদূর যেতে প্রস্তুত।”


ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি উদ্যোগকেও তিনি স্বাগত জানান। তিনি বলেন, রাশিয়া শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ খোলা রেখেছে এবং ভারতের শান্তি প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেয়। একইসঙ্গে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
পেসকভ শেষ পর্যন্ত বলেন, ভারতের দ্রুত সমৃদ্ধির এই পর্যায়ে রাশিয়া “ভারতের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে গর্ব অনুভব করে।”