আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডরসেটের জেল খাতা থেকে ফাঁস হল ভয়াবহ নিরাপত্তা ব্যর্থতা। দণ্ডপ্রাপ্ত ধর্ষক ও মহিলা কারারক্ষীর অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে তীব্র প্রশ্নের মুখে ব্রিটেনের কারা ব্যবস্থা ডরসেটের এইচএমপি দ্য ভার্নে কর্মরত এক মহিলা কারারক্ষী ও এক দণ্ডপ্রাপ্ত ধর্ষকের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার পর ব্রিটেনের কারা ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। চেরি-অ্যান অস্টিন-স্যাডিংটন নামে ২৯ বছর বয়সি ওই কারারক্ষী Bradley Trengrove নামের এক বিপজ্জনক বন্দির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে এবং তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।
২০২২ সালের গ্রীষ্মে ডিউটির সময় অস্টিন-স্যাডিংটন বন্দি ট্রেনগ্রোভের কাছ থেকে একটি ম্যাগাজিন পান। সামান্য উপহার মনে হলেও, পাতার ভাঁজের মধ্যে লুকানো ছিল বন্দির গোপন মোবাইল নম্বর। সিসিটিভির উপস্থিতিতে তিনি নম্বরটি রিপোর্ট করবেন কি না—এই দ্বিধায় ছিলেন। পরে তিনি বলেন, “আমি ভাবছিলাম বলব কি না। কিন্তু তখন এসব নিয়ে ভাবিনি, শুধু নম্বরটা লুকিয়ে ফেলেছিলাম।”
এই সিদ্ধান্তই ছিল ভবিষ্যতের ভয়াবহ বিপদের ইঙ্গিত। অল্পদিনের মধ্যেই দু’জনের মধ্যে শুরু হয় টেক্সট বার্তা ও ফোনালাপ। ট্রেনগ্রোভ তখন জেলের ওয়ার্কশপে হ্যান্ডিম্যান হিসেবে কাজ করতেন—একটি জায়গা যেখানে মাঝে মধ্যেই ক্যামেরার অগোচরে থাকা যায়। অস্টিন-স্যাডিংটন জানান, তারা ওয়ার্কশপের নির্জন কোণে দেখা করতেন, কথা বলতেন এবং পরে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি দাবি করেন মোট “চার-পাঁচবার” এমন হয়েছে যদিও ট্রেনগ্রোভ দাবি করেন “৩০ থেকে ৪০ বার”।
২০১৫ সালে ট্রেনগ্রোভকে একটি কিশোরীকে বারবার ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের অপরাধে ১৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়। এমনকি রায় ঘোষণার পর আরও প্রায় ২০ জন মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হামলার অভিযোগ আনেন। বিচারক তাঁকে বর্ণনা করেছিলেন “অত্যন্ত বিপজ্জনক” অপরাধী হিসেবে।
তবুও অস্টিন-স্যাডিংটন তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান। ট্রেনগ্রোভ দাবি করেন তাঁর ওপর আনা ধর্ষণের অভিযোগ নাকি “মিথ্যা”, কিশোর বয়সের একটি সম্পর্কই নাকি ভুলভাবে রিপোর্ট করা হয়েছিল। বিচ্ছিন্ন ও আবেগগতভাবে দুর্বল অনুভব করছিলেন অস্টিন-স্যাডিংটন—তিনি সেই গল্পেই বিশ্বাস করেন। খুব দ্রুতই সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে ট্রেনগ্রোভের মা ও আত্মীয়রা অস্টিন-স্যাডিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বন্দি তাঁকে প্রেমের আশ্বাস, ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন। এমনকি তাঁর সন্তানদের সঙ্গেও ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার কথা বলেন।
অস্টিন-স্যাডিংটন গর্ভবতী হলে ট্রেনগ্রোভ ‘সম্পর্কের দায় নেওয়ার’ আশ্বাস দেন। তবে গর্ভপাতের পর পরিস্থিতি বদলে যায়—সে নিয়মিত ফোন নজরদারি, মানসিক চাপ ও অপরাধবোধ আরোপ করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। মাসের পর মাস গোপন যোগাযোগ, অবৈধ ফোনকল ও সিসিটিভি-বিহীন স্থানে দেখা করার পর ২০২৩ সালের মে মাসে ঘটনা ফাঁস হয়। অস্টিন-স্যাডিংটনকে গ্রেপ্তার করা হয় বন্দির কাছে ক্যালপল সিরিঞ্জ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টায়। সিরিঞ্জটি ব্যবহার করে ট্রেনগ্রোভ চাইছিলেন তাঁর শুক্রাণু অস্টিন-স্যাডিংটন যেন নিজেই ইনসেমিনেট করেন।
এই ঘটনার পর ট্রেনগ্রোভকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করা হয় আর অস্টিন-স্যাডিংটন সেদিনই পদত্যাগ করেন। ২০২৫ সালের মে মাসে আদালত ট্রেনগ্রোভকে অতিরিক্ত দুই বছরের সাজা দেন। অস্টিন-স্যাডিংটন দোষী সাব্যস্ত হন misconduct in public office এবং নিষিদ্ধ বস্তু জেলে প্রবেশ করানোর অপরাধে। তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মেরুদণ্ডে স্ট্রোক করে কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। বিচারক এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাঁর দুই বছরের সাজা স্থগিত রাখেন।
নিজেই বলেন, “আমি জেলে যাইনি ঠিকই, কিন্তু সারা জীবনের জন্য আমার শরীরটাই আমার কারাগার হয়ে গেছে।” ব্রিটেনের বিচার মন্ত্রক জানায়, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জন কারাকর্মীর বিরুদ্ধে বন্দির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি—অনেকে তদন্ত শুরুর আগেই পদত্যাগ করেন বা অভিযোগ প্রকাশই পায় না। অস্টিন-স্যাডিংটন বলেন, প্রশিক্ষণে তাঁদের বারবার সতর্ক করা হত—“তারা লক্ষ্য ঠিক করে, ছোট অনুরোধ দিয়ে শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে বড় দাবিতে পৌঁছে যায়।”
বর্তমানে হুইলচেয়ারে বন্দী জীবন যাপন করলেও তিনি ইতিবাচক পথে ফিরতে চেষ্টা করছেন। পুনর্বাসন সেবায় যুক্ত হয়েছেন এবং যৌন নির্যাতনের শিকারদের সহায়তা করে এমন একটি চ্যারিটি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। অস্টিন-স্যাডিংটন বলেন, তাঁর গল্প অন্যদের সতর্ক করবে—কারাগারের ভেতরের অনিরাপদ পরিবেশ ও আবেগগত দুর্বলতাকে অপরাধীরা কিভাবে কাজে লাগায়, তা যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই কেলেঙ্কারি আবারও প্রমাণ করল—ব্রিটেনের জেল ব্যবস্থায় নজরদারি, প্রশিক্ষণ ও মানসিক সহায়তার ঘাটতি কতটা গভীর।
