আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় নিজের প্রথম ক্রিসমাস মধ্যরাতের প্রার্থনা (মিডনাইট মাস) পরিচালনা করে পোপ লিও গাজা উপত্যকা ও প্যালেস্টাইনের জনগণের মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। খ্রিস্টের জন্মকথার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যিশু জন্মেছিলেন এক সাধারণ গোয়ালঘরে যেখানে ঈশ্বর মানুষের মাঝেই তাঁর বাসা গেড়েছিলেন। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে পোপ প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে গাজায় টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি, ঝড় আর তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতে বসবাস করা মানুষগুলোর কথা আমরা কীভাবে ভুলে যেতে পারি?”
পোপ লিও স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতের একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান হতে পারে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাঁর বক্তব্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা, উদ্বাস্তু প্যালেস্টাইনের পরিবার এবং সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও হিংসার শিকার গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রসঙ্গেও পোপ কথা বলেন। তিনি বলেন, “অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর দেহ আজ সংকটে যারা অসংখ্য যুদ্ধের ভার বইছে। কিছু যুদ্ধ এখনও চলছে, কিছু শেষ হলেও রেখে গেছে ধ্বংসস্তূপ আর সারতে না-পারা ক্ষত।”
একই সঙ্গে তরুণদের দুর্দশার কথাও তুলে ধরেন পোপ লিও। তাঁর ভাষায়, “ভেঙে পড়েছে সেই তরুণদের মন ও জীবন, যাদের অস্ত্র ধরতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুদ্ধের সম্মুখসারিতে দাঁড়িয়ে তারা অনুভব করছে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া দায়িত্বের অর্থহীনতা এবং সেই মিথ্যাচার, যা বক্তৃতার মাধ্যমে তাদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়।”
এই প্রার্থনা সভা থেকে পোপ বিশ্বের সব যুদ্ধ ও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক সংঘাতের অবসান কামনা করেন। বিশেষ করে তিনি ইউক্রেন, সুদান, মালি, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সংঘাতের কথা উল্লেখ করেন। পোপ বলেন, “অস্ত্রের গর্জন থামুক। আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন ও দায়বদ্ধতায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যেন সাহসের সঙ্গে আন্তরিক, সরাসরি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সংলাপে বসে।”
এদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে দুই বছর পর আবার বড় পরিসরে ক্রিসমাস উদযাপন হয়েছে। গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে আগের বছরগুলোতে এই আয়োজন বাতিল করা হয়েছিল। এ বছর হাজার হাজার মানুষ বেথলেহেমে জড়ো হয়ে ক্রিসমাস উদযাপন করেন।
উৎসবের নেতৃত্ব দেন জেরুজালেমের ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিৎসাবাল্লা। তিনি ক্রিসমাসকে “আলোয় ভরা” করার আহ্বান জানান। সম্প্রতি গাজা সফর করে আসা পিৎসাবাল্লা বলেন, তিনি সেখানে গাজার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা সবাই একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিই আমরাই হব আলো। আর বেথলেহেমের আলোই হলো সারা বিশ্বের আলো।”
পোপ লিওর এই বক্তব্য এবং বেথলেহেমের পুনরুজ্জীবিত ক্রিসমাস উদযাপন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে শান্তি, মানবিক সহানুভূতি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাধানের আকাঙ্ক্ষাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।
