আজকাল ওয়েবডেস্ক: জার্মানির হামবুর্গে জলের নমুনায় বন্য পোলিও ভাইরাস (Wild Poliovirus Type 1—WPV1) শনাক্ত হওয়ার ঘটনা সেখানে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরের অক্টোবরের সপ্তাহে সংগৃহীত একটি নমুনায় এই ভাইরাস পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।


যদিও এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস কেবলমাত্র জলের মধ্যেই পাওয়া গেছে, মানবদেহে সংক্রমণের কোনো ঘটনা বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর সন্ধান মেলেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এর আগে সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৪ আগস্ট আফগানিস্তানের কান্দাহারে সংগৃহীত নমুনায় WPV1 শনাক্ত হয়েছিল। এই হিসেবে জার্মানিতে তিন দশকেরও বেশি সময় পর জলে বন্য পোলিও ভাইরাস ধরা পড়ল। মানুষের শরীরে বন্য পোলিও সংক্রমণের শেষ ঘটনা ঘটেছিল ৩০ বছর আগে।


২০২১ সালে নজরদারি শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বারের মতো জার্মানির জলে পোলিও ভাইরাস শনাক্ত হল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নজরদারির কারণেই ভাইরাসটি খুব প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।


হামবুর্গ প্রশাসন ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জার্মানির প্রধান জনস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। আরও জলের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।


টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা হবে সম্ভাব্য সংক্রমণের পথ নির্ণয়, ভবিষ্যৎ সমস্যা মূল্যায়ন ও জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগেভাগে শনাক্তকরণের ফলে প্রশাসনের হাতে সময় রয়েছে যাতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।


বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন—সংক্রমণের ঝুঁকি কম, কারণ জার্মানিতে পোলিও টিকাকরণের হার অত্যন্ত উচ্চ। অধিকাংশ নাগরিক শৈশবেই পোলিওর বিরুদ্ধে পূর্ণ টিকাকরণ সম্পন্ন করে। ফলে ভাইরাসটি জলে থাকলেও ব্যাপক সংক্রমণ বা প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাদের মতে, জলে ভাইরাস শনাক্ত হওয়া মানে পরিবেশগত নজরদারি কার্যকর হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী পোলিও নির্মূলের লড়াইয়ে নতুন করে সতর্কতার বার্তা দিচ্ছে। WHO এবং GPEI বারবার সতর্ক করেছে—যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশ পোলিওমুক্ত না হয়, ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো দেশই পুরোপুরি নিরাপদ নয়।


বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “পোলিও নির্মূলের শেষ পর্যায় সবচেয়ে কঠিন। কোনো একটি দেশের নজরদারি দুর্বল হলেই ভাইরাস আবার ফিরে আসতে পারে।” হামবুর্গে বর্জ্যজলে WPV1 শনাক্ত হওয়া উদ্বেগজনক হলেও পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শক্তিশালী টিকাকরণ কাভারেজ, দ্রুত শনাক্তকরণ এবং কঠোর নজরদারি জার্মানিকে বড় কোনো ঝুঁকি থেকে রক্ষা করছে। তবে এই ঘটনা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিল—পোলিও নির্মূলের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।