আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ফের তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রবিবার এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভারতকে তার নিজের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচে কবর দেওয়া হবে।” তার এই মন্তব্য ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর কঠোর সতর্কবার্তার পরেই দিল পাকিস্তান। কয়েকদিন আগেই দ্বিবেদী বলেছিলেন, যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রপোষিত সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যায়, তবে তাকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হবে।

ভারতের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে জোরালো প্রতিক্রিয়া আসায় ইসলামাবাদ দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েছে। আসিফ অভিযোগ করেন যে ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং তা আসলে “তাদের হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা।” তিনি আরও দাবি করেন, “ভারতীয় নেতৃত্বের এই বক্তব্য তাদের কলঙ্কিত সুনাম ঢাকার চেষ্টা। মে মাসের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ০-৬ স্কোরে যে পরাজয় তারা স্বীকার করেছে, এবার লড়াই হলে ফল আরও কঠিন হবে।” যদিও আসিফের উল্লেখিত “০-৬ স্কোর”-এর কোনো প্রমাণ পাকিস্তান পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি, এবং এটি তাদের দাবি করা  ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ইঙ্গিত হিসেবেই ধরা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৭ মে ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’, যা ছিল ২২ এপ্রিল পাহালগাঁও  সন্ত্রাসী হামলার জবাব। ওই অভিযানে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানে। প্রায় চার দিন ধরে তীব্র সংঘর্ষ চলার পর ১০ মে দুই পক্ষের মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ স্থগিত রাখার সমঝোতা হয়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছিল, কারণ ভারতীয় বাহিনীর হামলায় তাদের বহু সামরিক পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

৪ অক্টোবর জেনারেল দ্বিবেদী পাকিস্তানকে আবারও সতর্ক করে বলেন, এবার ভারত সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং ভবিষ্যতে আর সংযম দেখাবে না। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “অপারেশন সিঁদুর ১.০ চলাকালীন আমরা সংযম দেখিয়েছিলাম, কিন্তু এবার তা হবে না। এবার এমনভাবে জবাব দেওয়া হবে যাতে পাকিস্তান ভাবতে বাধ্য হয়, সে আদৌ বিশ্বের মানচিত্রে থাকবে কি না।”

আরও পড়ুন: ''পাঁচ হাজারে দিবি?" তরুণীর হাত চেপে ধরে যেইটা করল ব্যক্তি, শুনলে রোম খাড়া হয়ে যাবে!

এরই মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এ.পি. সিংহ শুক্রবার জানিয়েছেন যে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতীয় আক্রমণে অন্তত এক ডজন পাকিস্তানি সামরিক বিমান, যার মধ্যে মার্কিন তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও ছিল, ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি পাকিস্তানের দাবিকে “কল্পনাপ্রসূত গল্প” বলে আখ্যা দেন এবং জানান, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের অন্তত চারটি রাডার স্টেশন, দুটি কমান্ড সেন্টার, দুটি রানওয়ে ও তিনটি হ্যাঙ্গার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হায়দরাবাদে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ভারতের সীমানা যে কোনো সময় অতিক্রম করা যেতে পারে যদি তা দেশের নিরাপত্তা ও ঐক্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়। তিনি ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলা এবং সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উদাহরণ টেনে বলেন, “দেশের সুরক্ষার জন্য আমরা কোনো সীমা মানি না।” পাকিস্তানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, সির ক্রিক অঞ্চলে পাকিস্তানের কোনো ধরনের দুঃসাহসিক পদক্ষেপ হলে তার জবাব এমনভাবে দেওয়া হবে যা “ইতিহাস ও ভূগোল—দুটোকেই বদলে দিতে পারে।”

গুজরাটের কচ্ছের রান এবং পাকিস্তানের মধ্যবর্তী প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জোয়ারভাটা অঞ্চল সির ক্রিককে দুই দেশই বিতর্কিত বলে দাবি করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে সামরিক সক্রিয়তা বাড়ায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়েছে।

পাহালগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারত শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে—সিন্ধু  জল চুক্তি স্থগিত রাখা তার অন্যতম উদাহরণ। নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, ইসলামাবাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো আলোচনার প্রশ্নই উঠবে না, যদি না আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা।

এই প্রেক্ষাপটে দুই প্রতিবেশী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে মৌখিক যুদ্ধ এবং সীমান্ত উত্তেজনা যে নতুন এক বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে।