আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ইসলামাবাদের আদালতের বাইরে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত হওয়ার পর সরাসরি ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। সোমবার ওয়ানার আফগান সীমান্তঘেঁষা এলাকায় একটি ক্যাডেট কলেজে হামলার দায়ও তিনি ভারতের ওপর চাপিয়েছেন। পাকিস্তান সরকারের সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান জানায়, শরিফ দাবি করেছেন ভারতে মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এই দুই হামলার পেছনে রয়েছে।
শরিফ বলেন, “ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে। ইসলামাবাদ ও ওয়ানার হামলাগুলো ভারতের রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষক সন্ত্রাসবাদের অংশ।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলাটি যেই গোষ্ঠী ঘটিয়েছে, একই সংগঠনই আফগান ভূমি ব্যবহার করে ওয়ানার ক্যাডেট কলেজের নিরীহ শিশুদের লক্ষ্য করে দ্বিতীয় হামলাটি চালিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই নিজের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়ে তা রপ্তানি করে এসেছে। আন্তর্জাতিক মহল বহুবার জানিয়েছে—সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়, প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্টের ভিত্তি তৈরি করেছে পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক। কিন্তু যখনই পাকিস্তান সেই সন্ত্রাসের ফল ভোগ করতে শুরু করে, তখনই তারা ভারতের দিকে অভিযোগ ছুঁড়ে দেয়। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
পাকিস্তানের ভেতরে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর হামলাগুলো নিয়ে বহুবার ইসলামাবাদ সরাসরি আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে দায়ী করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন এক প্রচারে পাকিস্তান দাবি করছে TTP নাকি ভারতের ‘পুতুল’, এমনকি হাস্যকরভাবে TTP-কে “ফিতনা আল-হিন্দুস্তান” নাম দিয়ে ভারত-যোগ প্রমাণের চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য রাজনৈতিক নাট্যরূপ।
প্রতিবেদনে শরিফ আরও বলেন, “যখন ভারত-সমর্থিত জঙ্গিরা ইসলামাবাদে হামলা চালাচ্ছে, একই নেটওয়ার্ক আফগান সীমানা ব্যবহার করে ওয়ানাতেও শিশুদের নিশানা করছে। আফগান মাটিতে ভারতীয় প্রভাবে চালানো এমন নৃশংস হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।” তবে পাকিস্তানের এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো স্বাধীন বা আন্তর্জাতিক প্রমাণ এখনও হাজির করা হয়নি।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা নীতি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট’ হিসেবে ব্যবহার, এবং সীমান্ত অঞ্চলে দুর্বল গোয়েন্দা কাঠামোর কারণে দেশটি আজ নিজস্ব সন্ত্রাসবাদের শিকার। ২০০৭ থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানে হাজারো হামলা TTP, আল-কায়েদা, আইএস–সহ বহু জঙ্গি সংগঠন ঘটিয়েছে, যাদের বড় অংশই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ফাঁকফোকর ব্যবহার করেছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও কূটনৈতিক মহল বলছে—পাকিস্তানের এই অভিযোগ মূলত রাজনৈতিক চাপ সামলানোর কৌশল। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, সেনা-মুখী নীতিনির্ধারণ, এবং প্রাদেশিক অস্থিরতার দায় সরকার ও সেনাবাহিনী ভাগ করে নিতে না চাওয়ায় ভারতকে দোষারোপ করা পাকিস্তানের বহুদিনের অভ্যাস।
ফলে ইসলামাবাদ আদালত-হামলার পর ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগ নতুন নয়—বরং পুরোনো পালানোর রাজনীতিরই আরেকটি অধ্যায়।
