আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাবুলের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। বিষয়টিকে ভারতের 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-এফ (জেইউআই-এফ) প্রধান তথা পাক সংসদ সদস্য মাওলানা ফজলুর রেহমান। ইসলামাবাদের পদক্ষেপকে ভণ্ডামি বলে নিন্দাও করেছেন তিনি।
আফগানিস্তানে হামলার জন্য আসিম মুনিরের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুক্তির ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাওলানা ফজলুর রহমান। তাঁর কথায়, যদি পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে চালানো হামলাকে ন্যায্য বলে মনে করা হয়, তবে ভারত যখন সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করার জন্য পাক ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, তখন পাকিস্তানের আপত্তির কোনও ভিত্তি থাকে না।
রেহমান সোমবার করাচির লিয়ারি এলাকার 'মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-ই-উম্মত' সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এই শহর সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, কারণ রণবীর সিং অভিনীত 'ধুরন্ধর' চলচ্চিত্রটির পটভূমি ছিল এই লিয়ারি। লিয়ারির আন্ডারওয়ার্ল্ডে তথ্যদাতা ও কর্মীদের কার্যকলাপই হল 'ধুরন্ধর' চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু।
রেহমান ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, "যদি আপনারা বলেন যে আমরা আফগানিস্তানে আমাদের শত্রুদের ওপর হামলা করেছি এবং তাকে ন্যায্য প্রমাণ করেন, তাহলে ভারতও বলতে পারে যে- তারা বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে এবং কাশ্মীরে হামলার জন্য দায়ী গোষ্ঠীগুলোর সদর দফতরে হামলা করে ঠিক করেছে। তখন আপনারা কীভাবে আপত্তি জানান? এখন আফগানিস্তানও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনছে। আপনারা কীভাবে এখন উভয় অবস্থানকে ন্যায্য প্রমাণ করবেন?"
জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-এফ প্রধানের মন্তব্যে বিশেষভাবে 'অপারেশন সিঁদুর'-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর
চলতি বছর ৭ই মে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) নয়'টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ভোররাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল জইশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বাহাওয়ালপুর এবং লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি মুরিদকে।
এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল 'অপারেশন সিঁদুর'। এই অভিযান ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও ২২শে হামলার প্রতিশোধ বলে জানানো হয়। পহেলগাঁও হামলায় লস্কর-ই-তৈবার একটি উপগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীবাদীরা ২৬ জন সাধারণ নাগরিককে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিল।
জঙ্গি লঞ্চপ্যাডগুলোতে এই নির্ভুল হামলার জবাবে পাকিস্তান আগ্রাসন দেখায়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ড্রোন এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতের বেশ কয়েকটি শহর ও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে, যা ভারতীয় বাহিনী প্রতিহত করে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান উত্তেজনা
ফজলুর রহমান আফগানিস্তান বিষয়ে পাকিস্তানের শাহবাজ সরকারের নীতির একজন ধারাবাহিক সমালোচক। অক্টোবরে, দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা যখন তুঙ্গে ছিল, তখন তিনি দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন। 'দ্য ডন'-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি বলেছিলেন, "অতীতে আমি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা পালন করেছিলাম, একনও আমি তা করতে পারি।"
রেহমান এই অঞ্চলে যথেষ্ট প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত এবং তিনিই একমাত্র পাকিস্তানি আইনপ্রণেতা যিনি তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে দেখা করেছেন।
সম্প্রতি ভারত, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের নতুন হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একটি সাপ্তাহিক সংবাদিক বৈঠকে বলেন, "আমরা সীমান্ত সংঘর্ষের খবর দেখেছি, যাতে বেশ কয়েকজন আফগান সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন।" তিনি বলেন, "আমরা নিরীহ আফগান জনগণের ওপর এই ধরণের হামলার নিন্দা জানাই। ভারত আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানায়।"
তালিবান সরকারের একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন যে, পাকিস্তানই হামলা শুরু করেছে এবং কাবুল "জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে"।
২০২১ সালে তালিবান কর্তৃপক্ষ কাবুলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার পর থেকে দুই (পাকিস্তান-আফগানিস্তান) দেশর সম্পর্ক তলানীতে। ইসলামাবাদ তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। সেই অভিযোগ আফগান সরকার বার বার অস্বীকার করেছে।
