আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দেখা ক্যানসারগুলোর একটি। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, এবং দেরিতে শনাক্ত হওয়ার কারণে মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে বেশি। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কি ভারতে স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর হল হ্যাঁ—সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে এআই হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
এআই মূলত বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল ডেটা বিশ্লেষণ করে নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। স্তন ক্যানসার শনাক্তের ক্ষেত্রে এআই-ভিত্তিক সফটওয়্যার ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যান বিশ্লেষণ করে খুব ছোট আকারের টিউমার বা অস্বাভাবিকতা ধরতে সক্ষম, যা অনেক সময় মানবচোখে ধরা পড়ে না। আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে এআই রেডিওলজিস্টদের সমান বা তার থেকেও ভালো নির্ভুলতায় ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে।
ভারতের মতো জনবহুল দেশে এআই-এর গুরুত্ব আরও বেশি। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় রেডিওলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব একটি বড় সমস্যা। এআই-চালিত স্ক্রিনিং টুল মোবাইল ম্যামোগ্রাফি ভ্যান বা জেলা হাসপাতালেও ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে রিপোর্ট প্রাথমিকভাবে এআই বিশ্লেষণ করবে এবং সন্দেহজনক কেসগুলো বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে। এতে সময় বাঁচবে এবং রোগ নির্ণয়ের গতি বাড়বে।
ইতিমধ্যেই ভারতে কয়েকটি স্টার্টআপ ও গবেষণা সংস্থা এআই-ভিত্তিক স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। আইআইটি এবং বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের গবেষণায় স্থানীয় ডেটার ওপর প্রশিক্ষিত এআই মডেল তৈরি করা হচ্ছে, যা ভারতীয় নারীদের শরীরগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বেশি মানানসই। কারণ পশ্চিমের দেশের ডেটার ওপর তৈরি এআই সবসময় ভারতীয় প্রেক্ষাপটে সমান কার্যকর নাও হতে পারে।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। ডেটার গোপনীয়তা, এআই সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা এবং চিকিৎসকদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা—এই বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই কখনোই চিকিৎসকের বিকল্প নয়; বরং এটি একটি সহায়ক প্রযুক্তি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবসময় প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের হাতেই থাকা উচিত।
সরকারি স্তরে যদি এআই-ভিত্তিক স্ক্রিনিংকে জাতীয় ক্যানসার কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তাহলে স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এতে চিকিৎসা শুরু হবে আগেই, খরচ কমবে এবং প্রাণ বাঁচার সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়বে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ভারতে স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এআই হতে পারে ভবিষ্যতের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র।
