আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ইতিমধ্যেই ফাটল ধরেছিল। বার বার প্রত্যার্পণের আবেদন জানানো হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি নয়াদিল্লি। এরই মাঝে বাংলাদেশে ছাত্রনেতা ওসমান হাদির হত্যা, হিন্দু দীপু দাসকে পিটিয়ে হত্যা এবং প্রকাশ্য রাস্তায় পুড়িয়ে ফেলার পর দুই দেশের দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে তিক্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

গত কয়েক দিনে উভয় দেশ একে অপরের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে হাইকমিশনগুলির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে ভিসা কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকার গুলশান এলাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে এগিয়ে যাওয়া একদল বিক্ষোভকারীকে ঢাকা পুলিশ বাধা দিলেও, সম্প্রতি দীপু চন্দ্র দাস নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনও পর্যন্ত যে খাতে বয়েছে

১৭ নভেম্বর: ২০২৪ সালের ছাত্র অভ্যুত্থানের সময়কার প্রাণঘাতী হিংসায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের আদালত শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এই রায়ের পর ভারত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে যে তারা ‘বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, আলোচনামূলক পরিবেশ এবং স্থিতিশীলতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। অন্যদিকে, ঢাকা ভারতের কাছে ‘পলাতক’ হাসিনাকে হস্তান্তরের দাবি জানায়।

১২ ডিসেম্বর: বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি ঢাকার একটি মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় মুখোশধারী বন্দুকধারীদের গুলিতে আহত হন।

১৫ ডিসেম্বর: এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিন বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে আশ্রয় দিতে পারে এবং ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যকে যা ‘সেভেন সিস্টারস’ নামেও পরিচিত, দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। হাসিনা-বিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ ঢাকার ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য রেখেছিলেন।

১৭ ডিসেম্বর: দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ ঢাকার গুলশান এলাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে এগিয়ে যাওয়া একদল বিক্ষোভকারীকে থামিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা গত বছরের জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পরে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যদের প্রত্যাবর্তনের দাবি জানাচ্ছিল। এই বিক্ষোভ মিছিল এবং এনসিপি নেতা আবদুল্লাহর মন্তব্য ভারতকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করতে বাধ্য করে। ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের অবনতি হতে থাকা নিরাপত্তা ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। 

১৮ ডিসেম্বর: সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওসমান হাদি মারা যান। হাদি গত বছরের গণতন্ত্রপন্থী অভ্যুত্থানের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশে নতুন করে হিংসার জন্ম দেয়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন এবং সংবাদপত্রের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

১৮ ডিসেম্বর: বিক্ষোভের মধ্যেই দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু শ্রমিককে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ১৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জামিরদিয়া ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, দীপুর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকেই এর সূত্রপাত। পুলিশ এবং পরিবারের দেওয়া তথ্য থেকে পরে জানা যায় যে, কর্মস্থলে বিরোধের জেরেই তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

২০ ডিসেম্বর: একদল বিক্ষোভকারী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে সমবেত হন এবং পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

২১ ডিসেম্বর: ভারত হিন্দু ব্যক্তিকে ‘ভয়াবহভাবে হত্যার’ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “ভারত বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে।” জয়সওয়াল নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের খবরগুলিকেও ‘বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

২২ ডিসেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে বিক্ষোভ। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শিলিগুড়ি-সহ দিল্লিতে ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ত্রিপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনও রবিবার মিশনের বাইরে বিক্ষোভ সম্মুখীন হওয়ার পর ভিসা পরিষেবা স্থগিত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর: বাংলাদেশি মিশনগুলির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের। তলবের কারণ হিসেবে ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে ভাঙচুর এবং ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।