আজকাল ওয়েবডেস্ক:পাকিস্তান ভারতের নিবন্ধিত উড়ান নিষিদ্ধ করায় বিমান চলাচল খাতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটি। পাকিস্তান এয়ারপোর্টস অথরিটি (পিএএ) মাত্র দুই মাসে ১,২৪০ কোটি পাকিস্তানি রুপি (প্রায় ৪.১ বিলিয়ন পিকে আর) রাজস্ব হারিয়েছে বলে ডন পত্রিকার বরাত দিয়ে জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে এক জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু—যাদের অধিকাংশই পর্যটক—ঘটনার পর ভারত ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এর জবাবে পাকিস্তান ২৪ এপ্রিল থেকে ভারতের নিবন্ধিত সব ধরনের বিমান, এমনকি ভারতীয় এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন, ভাড়া নেওয়া বা পরিচালিত বিমানসহ সামরিক উড়ানও পাকিস্তানি আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।

 

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ স্বীকার করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তান বিপুল পরিমাণ ওভারফ্লাইং (উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার) রাজস্ব হারিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আগে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ভারতীয় নিবন্ধিত বিমান পাকিস্তানি আকাশসীমা দিয়ে যাতায়াত করত। নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানের ট্রানজিট এয়ার ট্রাফিক প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে।

 

২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ জুনের মধ্যে ওভারফ্লাইং চার্জ থেকে পিএএ-র আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান এই নিষেধাজ্ঞা ২৪ আগস্ট ভোর ৪টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বাড়িয়েছে। পাকিস্তান পাইলট অথরিটি (পিপিএ) জারি করা নোটাম (NOTAM) অনুযায়ী, “পাকিস্তানি আকাশসীমা ভারতীয় নিবন্ধিত বিমান এবং ভারতীয় এয়ারলাইন্স/অপারেটরদের মালিকানাধীন, ভাড়া নেওয়া বা পরিচালিত বিমান, এমনকি সামরিক ফ্লাইটের জন্যও বন্ধ থাকবে।”

 

এদিকে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো অন্য আন্তর্জাতিক রুটে প্রভাবমুক্ত রয়েছে, তবে পাকিস্তানি বিমান সংস্থাগুলোও এখনও ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারছে না। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে এই নোটাম ২৩ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

 

উল্লেখ্য, পাহালগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার ঘনিষ্ঠ শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। এর পরই ভারত একাধিক পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, যার মধ্যে ছিল “অপারেশন সিঁদুর”—যা পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি পরিকাঠামোকে নিশানা করেছিল।

 

অপারেশন সিঁদুর ছিল এক অত্যন্ত কৌশলপূর্ণ সামরিক অভিযান, যা ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালনা করে। এই অভিযানে শত্রুপক্ষের গতিবিধি সম্পর্কে পূর্ণ নিশ্চয়তা ছিল না, ফলে গোটা পরিস্থিতি অনেকটা দাবা খেলার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেনারা প্রতিটি পদক্ষেপে হিসাব কষে এগিয়েছে, কারণ প্রতিপক্ষের পাল্টা আঘাতের সম্ভাবনা সবসময় বিদ্যমান ছিল। তবুও ভারতীয় সেনারা পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একেবারে নির্ণায়ক ‘চেকমেট’ দিতে সক্ষম হয়।

 

পাহালগামে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়, এবং এই অভিযান কেবল প্রতিশোধ নয়, কৌশলগত আধিপত্যও প্রতিষ্ঠা করে। সেনাবাহিনী আকাশপথ, স্থলপথ ও প্রযুক্তিগত নজরদারি একসঙ্গে ব্যবহার করে পাকিস্তানি অবস্থানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, দ্রুতগতির বাহিনী মোতায়েন এবং শত্রুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া ছিল এর অন্যতম দিক।

 

অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি পাকিস্তানের মনোবল ভেঙে দেয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করে যে, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত কৌশল ও মনোবলই আসল শক্তি। এই অভিযান ভারতের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।