আজকাল ওয়েবডেস্ক: কানাডার আবাসন সংকট দিন দিন তীব্র আকার নিচ্ছে। বাড়িভাড়া আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ভীষণভাবে সমস্যায় পড়েছেন। ঠিক সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু বাড়িওয়ালা। সাম্প্রতিক একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, কানাডার বিভিন্ন শহরে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটেদের কাছে টাকার পরিবর্তে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিচ্ছেন। অর্থাৎ, এক কথায় ‘সেক্স-ফর-রেন্ট’ চুক্তি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কীভাবে কাজ করছে এই ব্যবস্থা? অসংখ্য অনলাইন ভাড়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমের গ্রুপে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকছে—“ভাড়া মেটাতে হবে না, শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখতে হবে।” অনেক ক্ষেত্রে আবার বিজ্ঞাপন এমনভাবে দেওয়া হয় যাতে প্রথমে স্বাভাবিক মনে হলেও যোগাযোগ করলেই যৌন সম্পর্কের শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তরুণীদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ‘ডিল’-এর টার্গেট মূলত তরুণী ছাত্রছাত্রী ও নতুন চাকরিজীবীরা, যাঁরা শহরে এসে উঁচু ভাড়ার চাপে হিমশিম খাচ্ছেন। অস্থায়ী সমাধানের খোঁজে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন এই চুক্তিতে রাজি হতে। ফলে শুরু হচ্ছে মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক শোষণ। অনেকে আবার ভয়ে বা লজ্জায় প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। ফলে এই নীরবতা আরও উৎসাহিত করছে অসাধু বাড়িওয়ালাদের।
আইনের দৃষ্টিতে যদিও ইটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। কানাডার আইন অনুযায়ী, বাড়িওয়ালা যদি ভাড়াটের কাছ থেকে জোরপূর্বক বা চাপে ফেলে এই ধরনের প্রস্তাব চান, তবে সেটি যৌন হয়রানি ও অপরাধের আওতায় পড়ে। কিন্তু বাস্তবে প্রমাণের অভাবে বহু ঘটনাই সামনে আসছে না। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও তদন্তে প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই নিয়ে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে “শোষণের আধুনিক রূপ” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, বাড়ির অভাব ও ভাড়া বৃদ্ধিকে অজুহাত করে মহিলাদের দেহব্যবসায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, এই পরিস্থিতি সমাজে এক ভয়ঙ্কর বার্তা দিচ্ছে— অর্থনৈতিক চাপে পড়ে যৌন সম্পর্ককে স্বাভাবিক সমাধান হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে মানুষকে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করলে ভাড়াটেদের ঘর খালি করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের উচিত দ্রুত সাশ্রয়ী ভাড়ার ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা, ছাত্রছাত্রী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য হাউজিং স্কিম চালু করা। পাশাপাশি অনলাইন ভাড়া বিজ্ঞাপনে কড়া নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে এই ‘সেক্স-ফর-রেন্ট’ প্রবণতা আরও ভয়াবহ আকার নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কানাডার ভাড়ার বাজারের এই বিকৃত রূপ শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক নৈতিকতাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
