আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার চলমান দুর্নীতি মামলায় প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। রবিবার পাঠানো এই আবেদনে নেতানিয়াহুর আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন যে দীর্ঘমেয়াদী বিচারপ্রক্রিয়া তার কার্যকরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং তাই “জাতীয় স্বার্থে” ক্ষমা প্রদান করা উচিত।
ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আজ আমার আইনজীবীরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন জমা দিয়েছেন। আমি আশা করি যাঁরা দেশের মঙ্গল চান, তাঁরা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করবেন।”
তিনি এবং তাঁর আইনজীবীরা আবারও দাবি করেছেন যে তিনি কোনও অপরাধ করেননি এবং বিচার শেষ হলে তিনি সম্পূর্ণ খালাস পাবেন। তবে তারা কোনও ধরনের অপরাধ স্বীকার করেননি।
বিরোধীদের কড়া আপত্তি
বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, অপরাধ স্বীকার না করে বা রাজনীতি থেকে সরে না দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়া “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অপমান”। তিনি বলেন, “ক্ষমা চাওয়া যাবে কেবল তখনই—যখন কেউ অপরাধ স্বীকার করবে, অনুশোচনা প্রকাশ করবে এবং জনজীবন থেকে সরে দাঁড়াবে।” বিরোধী দলের আরেক নেতা, প্রাক্তন সামরিক উপপ্রধান ইয়াইর গোলান, সরাসরি পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
আইনি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন
ইসরায়েলে সাধারণত ক্ষমা তখনই বিবেচনা করা হয় যখন বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শেষ হয় এবং ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু নেতানিয়াহুর আইনজীবীরা দাবি করছেন, রাষ্ট্রপতি “বিশেষ পরিস্থিতিতে” বিচার চলাকালীনই ক্ষমা দিতে পারেন—বিশেষ করে যখন জনমতের বিভাজন জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এ আবেদনকে “অসাধারণ” ও “গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে” বলে বর্ণনা করেছে। একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, আবেদনটি বিচার মন্ত্রকের ক্ষমা বিভাগে পাঠানো হবে, যেখানে মতামত সংগ্রহের পর প্রেসিডেন্টের আইনি উপদেষ্টা সুপারিশ প্রস্তুত করবেন।
ট্রাম্পের সমর্থন
এই ঘটনাকে আরও নাটকীয় করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চিঠি। তিনি হারজগকে আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য, দাবি করে যে মামলাটি “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”।
সরকারি শিবিরের প্রতিক্রিয়া
সরকারের অভ্যন্তরে নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন স্পষ্ট। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচসহ জোট নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন।
মামলার পটভূমি
২০১৯ সালে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়—মূল অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে যে তিনি ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যম মালিকদের সুবিধা দিয়েছিলেন ইতিবাচক সংবাদ কাভারেজ ও ব্যক্তিগত উপহার পাওয়ার বিনিময়ে।
টানা পাঁচ বছর ধরে বিচার চলছে, এবং সম্প্রতি আদালত তাকে সপ্তাহে তিনবার সাক্ষ্য দিতে বলেছে, যা তিনি “অবাস্তব এবং প্রশাসনিকভাবে ক্ষতিকর” বলে মন্তব্য করেছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নেতা—প্রথমবার ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০২২ সালের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফেরেন। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা তার ডানপন্থী জোটের জন্য ভবিষ্যৎ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে তার নেতৃত্ব ও গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা দেশ-বিদেশে বিতর্কিত হয়। যুদ্ধ চলমান থাকলেও তার বিরুদ্ধে এই বিচার এবং ক্ষমার আবেদন এখন ইসরায়েলি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। এখন প্রেসিডেন্ট হারজগ কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা শুধু নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নয়, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও বিচারব্যবস্থার পরীক্ষাও হয়ে উঠেছে।
