আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘস্থায়ী রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলন।  

চমকপ্রদভাবে, এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন প্রাক্তন মাওবাদী গেরিলা, দুর্গা প্রসাই। মাওবাদীরা একসময় রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার, সেই প্রসাই-ই রাজাকে ফেরানোর আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন।  

শুক্রবার প্রসাই তাঁর গাড়ি নিয়ে সংসদ ভবনের দিকে রওনা দেন এবং পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশের খোঁজে থাকা প্রসাই বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি দেশ ছাড়েননি এবং কাঠমান্ডুর একটি মন্দিরে রয়েছেন।  

রাজতন্ত্রপন্থীদের দাবি, দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জনগণের মধ্যে রাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে।  

এই আন্দোলনকে আরও তীব্র করেছে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের দেশে ফিরে আসা। মার্চ মাসের শুরুতে প্রায় ৪ লাখ সমর্থক রাজাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান তুলেছিল: "ফিরে আসুন রাজা, দেশকে বাঁচান!"

দুর্গা প্রসাইয়ের রাজনৈতিক জীবন জটিল ও নাটকীয়। একসময় মাওবাদীদের পক্ষে কাজ করা প্রসাই পরবর্তীতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কেপি ওলির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তবে, ২০২২ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি সরাসরি রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন।  

প্রসাই ২০২৩ সালে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নেপালকে আবার একটি হিন্দু রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। তার নেতৃত্বে "জাতি, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার অভিযান" শীর্ষক আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যা হাজার হাজার মানুষকে রাজপথে নামিয়েছে।  

সরকার প্রসাই ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। শুক্রবারের হিংসার পর তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি ও সাবেক মাওবাদী নেতা তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচণ্ডও প্রসাইয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।  

নেপালে রাজতন্ত্র ফিরবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে দুর্গা প্রসাইয়ের এই আন্দোলন এক যুগ পর রাজতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র বিতর্ককে আবার সামনে নিয়ে এসেছে।