আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালে জেন জি-র নতুন করে প্রতিবাদ শুরু। তীব্র আন্দোলনের জেরে সরকারের পতন ঘটার মাত্র দুই মাস পরেই সেখানে আবারও অস্থিরতার খবর সামনে এল। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বারা জেলায় পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সেখানে প্রশাসন দিনের বেলা পুনরায় কার্ফু জারি করতে বাধ্য হয়, কারণ জেন-জি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের সমর্থকদের সংঘর্ষ আবারও শুরু হয়।
বারা জেলা প্রশাসন দপ্তর দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কার্ফু বলবৎ রাখার নির্দেশ দেয়। প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। বৃহস্পতিবারের এই বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত ঘটে আগের দিন সিমরা এলাকায়, যেখানে তরুণ বিক্ষোভকারীরা সিপিএন-ইউএমএল কর্মীদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে প্রায় এক ডজনের মতো ইউএমএল কর্মী জড়িত থাকলেও পুলিশ মাত্র দু’জনকে আটক করে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জেন-জি আন্দোলনকারীরা। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করছে। ক্রমবর্ধমান হতাশা ও ক্ষোভ থেকে তাদের আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে থাকে। তারা দাবি তোলে—দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, পুলিশের জবাবদিহি এবং রাজনৈতিক দলের দৌরাত্ম্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ।
নতুন করে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে খবরটি, যেখানে বলা হয় যে সিপিএন-ইউএমএল সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর এবং যুব নেতা মহেশ বসনেত সিমরায় একটি সরকারবিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে কাঠমান্ডু থেকে রওনা হচ্ছেন। তারা বুদ্ধ এয়ারের বিমানের ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী বিমানবন্দরের আশপাশে জড়ো হতে থাকে।
প্রতিবাদকারীরা বিমানবন্দরে উপস্থিত ইউএমএল সমর্থকদের ঘিরে ধরে তীব্র স্লোগান ও প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিমানবন্দর অঞ্চলসহ আশপাশের এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়। বারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ধর্মেন্দ্র কুমার মিশ্র জানান, “অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য সাময়িক কার্ফু অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল।”
কিন্তু এই ধারাবাহিক সংঘর্ষ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা গভীর হচ্ছে, এবং তরুণ প্রজন্ম ক্রমেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তারা নতুন দিকনির্দেশনা, স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।
এর আগেই, সেপ্টেম্বর মাসে নেপালে জেন-জি-র নেতৃত্বে হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে দেশজুড়ে হিংসা ছড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ইস্যুকে কেন্দ্র করেই এই আন্দোলন শুরু হলেও দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, বৈষম্য ও অদক্ষ শাসনের বিরুদ্ধেও জনরোষ বিস্ফোরিত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ চরমে পৌঁছায়—পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৫১ জন নিহত এবং ১,৩০০-র বেশি মানুষ আহত হন। পরদিনই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন, এবং তার ইউএমএল সরকার পতন হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়—যিনি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ঘোষণা করেন, সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভে নিহতদের ‘শহিদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং হিংসার তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হবে। তিনি আরও দাবি করেন, বিক্ষোভের আড়ালে সংগঠিত আগুন, লুটপাট ও আক্রমণ ছিল একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।
নেপালের চলতি অস্থিরতা স্পষ্ট করে দিচ্ছে—তরুণ প্রজন্ম এখন পরিবর্তনের জন্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এবং দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে তারা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে চলেছে।
