আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার স্থানীয় সময় রাত সওয়া ১১টায় জাপানের উত্তর ও পূর্বের একটি বড় অংশে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর হোক্কাইডো, আওমোরি এবং ইওয়াতে প্রিফেকচারের জন্য সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সোমবার রাতে (স্থানীয় সময়) ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে জাপান উপকূল। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে সুনামি সতর্কাতা জারি করা হয়েছে। উপকূল এলাকায় তিন মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ছে। মানুষ আতঙ্কিত। উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। হাচিনোহে শহরের আওমোরি শহরের একটি হোটেলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি নিরাপত্তা পরীক্ষা চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছিল সোমবার মধ্যরাতেই।
সামনে এসেছে সেখানকার এক বাসিন্দার শেয়ার করা, ভয় ধরানো ভিডিও। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রবল কম্পনে রীতিমতো কাঁপছে সেখানকার দেওয়াল, কম্পিউটার পড়ে যাওয়ার জোগাড়। টেবিলের উপরে থাকা কাগজপত্র পড়ে যেতে দেখা গিয়েছে কম্পনের চোটে। কম্পনের পর, প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি সাংবাদিকদের বলেছেন, "সরকার জরুরি ভিত্তিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য একটি জরুরি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। সঙ্গেই জানান, মানুষের জীবন সবার আগে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে যথাসম্ভব।
একাধিক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, সোমবার রাতের কম্পনে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের আহত হয়েছেন। জরুরি পরিষেবাগুলি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর প্রায় ২৮,০০০ মানুষকে তাঁদের বাড়িঘর খালি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, একাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন স্থানীয়রা।
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি থাকায়, আওমোরির প্রায় ২,৭০০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, যা কিয়োডো নিউজের মতে, ভূমিকম্পের পরের কয়েক ঘন্টার মধ্যে কয়েকটি বাড়ি ছাড়া ফিরে এসেছে বিদ্যুৎ।
প্রাথমিকভাবে, জেএমএ তিন মিটার (১০ ফুট) উচ্চতা পর্যন্ত সুনামির সতর্কতা জারি করেছিল, যা উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছিল।
জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্র (এনসিএস) অনুযায়ী, অক্টোবরের শুরুতে হোনশুর পূর্ব উপকূলের কাছে রিখটার স্কেলে ৬.০ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জাপান ঘন ঘন ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়। কারণ এটি একাধিক টেকটোনিক প্লেট, বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট, ফিলিপিন্স সমুদ্র প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং উত্তর আমেরিকান প্লেটের মিলনে অবস্থিত। এছাড়াও জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ার বরাবর অবস্থিত। যা একটি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরি অঞ্চল।
এই টেকটোনিক স্থাপনার ফলে প্লেটগুলির ক্রমাগত নড়াচড়া এবং একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে, যার মধ্যে রয়েছে সাবডাকশন যেখানে একটি প্লেট অন্যটির নীচে ঢুকে যায়। এর ফলে প্রবল চাপ এবং ঘন ঘন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
জাপানের উচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণতার নেপথ্যে অবদান রাখার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে জাপান ট্রেঞ্চ। এটি একটি গভীর মহাসাগরীয় পরিখা যা প্লেট সাবডাকশনের সঙ্গে যুক্ত যা শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামির সৃষ্টি করতে পারে। জাপানে অনেক সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উপস্থিতি রয়েছে। যা টেকটোনিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
