আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইসরায়েল রোববার লেবাননের রাজধানী বেইরুটে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্য করা হয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ নেতাকে—এমন দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে হামলায় লক্ষ্যবস্তু নিহত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে তারা কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় অন্তত একজন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন।

হামলাটি হয় বেইরুটের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর হরেত হরেইকে, যা ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক একটি এলাকা হিসেবে পরিচিত। বিস্ফোরণের পরপরই আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বহুতল আবাসিক ভবনের নিচে জড়ো হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। সেখানকার পার্কিং এলাকায় গাড়ির ওপর ভারী ধ্বংসস্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলে এসে হিজবুল্লাহ-সমর্থিত সাংসদ আলি আম্মার বলেন, “এটি সম্পূর্ণভাবে একটি বেসামরিক এলাকা, এখানে কোনো সামরিক উপস্থিতি নেই।” তবে তিনি কারা লক্ষ্যবস্তু ছিলেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

বিস্ফোরণে ভবনটি দাঁড়িয়ে থাকলেও চারপাশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মী ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিপুল ভিড়ের কারণে কাজ ব্যাহত হয়। পরে ভিড় সরাতে কয়েক দফা আকাশে গুলি চালানো হয়। লেবাননের সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে।

গত জুনের পর এটাই প্রথমবার বেইরুটে ইসরায়েলি হামলা হলো। এর সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কয়েক দিনের মধ্যেই লেবাননে সফরে আসার কথা রয়েছে পোপ লিও চতুর্দশের। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের হামলা বেড়ে গেছে, যার প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে লেবাননের ওপর হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার চাপ বাড়িয়ে আসছে। অন্যদিকে লেবাননের সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সরকারের অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েল অভিযোগ করছে, হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননে নতুন করে সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলছে—একটি অভিযোগ যা লেবানন সরকার অস্বীকার করেছে।

লেবানন সরকার এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ইসরায়েলি হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, বারবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন জানিয়েছেন, লেবানন ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত—উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি পাহাড়চূড়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর দখল সরানো এবং হামলা বন্ধের লক্ষ্যে। তবে এ বিষয়ে ইসরায়েলের সাড়া এখনো স্পষ্ট নয়।

প্রেসিডেন্ট আউন ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম পুনরায় বলেছেন, লেবাননের ভূখণ্ডে কোনো অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র বহাল রাখা হবে না; হিজবুল্লাহসহ সব গোষ্ঠীকেই নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি তাদের।

সম্প্রতি দক্ষিণ লেবাননের সাইদনের কাছে আইন আল-হিলওয়ে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের আরেকটি হামলায় ১৩ জন নিহত হয়—বর্তমান যুদ্ধবিরতির পর সেটিই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনা। ওই হামলায় ইসরায়েল দাবি করে, সেখানে হামাসের একটি সামরিক স্থাপনা ছিল। কিন্তু হামাস তা অস্বীকার করে বলেছে, শিবিরের ভেতরে তাদের কোনো সামরিক অবকাঠামো নেই।

সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হামলা ও হিজবুল্লাহকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল–লেবানন উত্তেজনা এখন নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনিশ্চয়তার আবহে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।