আজকাল ওয়েবডেস্ক: যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিরক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে ইজরায়েল। এই দেশটি বিশ্বের প্রথম কার্যকরী ও যুদ্ধ-পরীক্ষিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন বিম’ মোতায়েনের ঘোষণা করেছে। এই প্রযুক্তি আধুনিক সামরিক যুদ্ধকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস আনুষ্ঠানিকভাবে এই সপ্তাহে আয়রন বিম উন্মোচন করেছে। প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেমন ইন্টারসেপ্টর ব্যবহারে প্রায় ৬০,০০০ ডলার খরচ হয়, সেখানে আয়রন বিমের লেজার প্রযুক্তি মাত্র ২ ডলার বিদ্যুৎ খরচে আসন্ন রকেট, ড্রোন এবং মর্টার ধ্বংস করতে সক্ষম।
ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেন, “যেই মুহূর্তে আমরা লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করব, সঙ্গে সঙ্গেই আঘাত করব কোনও সময় নষ্ট হয় না।” তাঁর মতে, এই প্রযুক্তি অসংখ্য জীবন বাঁচাবে এবং যুদ্ধ অর্থনীতিকে উল্টে দিয়ে শত্রুদের কার্যত দেউলিয়া করে দেবে।
আরও পড়ুন: অসহায় মায়ের মরিয়া গুগল সার্চ ফিরিয়ে দিল সন্তানের জীবন, অবাক চোখে দেখল গোটা বিশ্ব
আয়রন বিম কী?
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আয়রন বিম। এর আগে আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং অ্যারো সিস্টেমস এই দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষার মূল স্তম্ভ ছিল। নতুন লেজার প্রযুক্তি ছোট ও স্বল্প-পাল্লার হামলা যেমন রকেট, মর্টার, ড্রোন এবং নিচুতে উড়ন্ত বিমান প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ফলে ব্যয়বহুল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধকগুলোর ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন ইউনিট, ইজরায়েলি বিমান বাহিনী, রাফায়েল এবং এলবিট সিস্টেমসের যৌথ উদ্যোগে আয়রন বিম তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ইজরায়েলে দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে বাস্তবসম্মত যুদ্ধ-সিমুলেশন পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের আকাশসীমার হামলাকে নির্ভুলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম।
এতে ব্যবহৃত হয়েছে রাফায়েলের উন্নত “অ্যাডাপটিভ অপটিকস” প্রযুক্তি, যা দীর্ঘ দূরত্বেও স্থিতিশীল ও নির্ভুল লক্ষ্যভেদ সম্ভব করে তোলে। কার্যকারিতা ও দক্ষতায় এটি অভূতপূর্ব অগ্রগতি।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামনের দিনে এর শক্তি ও পাল্লা আরও বাড়ানো হবে। দীর্ঘমেয়াদে আয়রন বিম মহাকাশে মোতায়েনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা উন্নত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় কাজে লাগবে। এই স্বপ্নকে অনেকেই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের “স্টার ওয়ার্স” ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ধারণার সঙ্গে তুলনা করছেন।
গবেষণা ইউনিটের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়েহুদা এলমাকায়েস এই প্রযুক্তিকে বর্ণনা করেছেন “লেজার সক্ষমতার নতুন যুগের সূচনা” হিসেবে। তাঁর মতে, এটি এমন এক দৃষ্টান্ত, যা ইজরায়েলের প্রতিটি সামরিক খাতে নির্দেশিত শক্তি-ভিত্তিক অস্ত্র সংযোজনের পথ খুলে দেবে।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ কার্যকরভাবে আয়রন বিম মোতায়েন করা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এটি শুধু ইজরায়েল নয়, গোটা বিশ্বের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় এক প্রযুক্তিগত বিপ্লব আনতে পারে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও বাস্তবের সীমারেখা মিলিয়ে দিয়ে ‘আয়রন বিম’ আজ প্রমাণ করছে ভবিষ্যতের যুদ্ধ শুধু গোলা-বারুদে নয়, আলো আর শক্তিতেও লড়া সম্ভব।
