আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র ছয় বছর বয়সেই হঠাৎ করে হাঁটা, কথা বলা এমনকি শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল উইটেন ড্যানিয়েল নামে এক মার্কিন শিশু। প্রথমে চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন এটি সাধারণ ফ্লু, কিন্তু দ্রুতই বোঝা গেল, আসল কারণ ছিল অনেক বেশি গুরুতর। শেষ পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে মায়ের এক মরিয়া গুগল সার্চই তাকে ফিরিয়ে আনে জীবনে।
ঘটনাটি ঘটে গত এপ্রিলে। টেক্সাসের লাববক শহরের বাসিন্দা উইটেন মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডাক্তাররা প্রাথমিকভাবে জানান, সম্ভবত ফ্লু হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, সে আর হাঁটতে, কথা বলতে কিংবা নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে পারছিল না। অচেতন হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে ভেন্টিলেশনে নেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন শুল্ক দ্রুত প্রত্যাহার হতে পারে! কেন এমন কথা বললেন ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
শিশুটির মা কেইসি ড্যানিয়েল বলেন, “নিজের সন্তানকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখা, এ অনুভূতি বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দই নেই।” পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, এটি ফ্লু নয়, বরং উইটেনের মস্তিষ্কের ব্রেইনস্টেমে রক্তনালী ফেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই অবস্থাকে বলা হয় ক্যাভারনাস ম্যালফরমেশন বা ক্যাভারনোমা। প্রতি ৫০০ জনে একজন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বেশিরভাগেরই কোনও উপসর্গ দেখা যায় না, তবে উপসর্গ দেখা দিলে খিঁচুনি, রক্তক্ষরণ, মাথাব্যথা, দৃষ্টিসংক্রান্ত সমস্যা এবং অঙ্গ দুর্বলতার মতো জটিলতা দেখা দেয়। প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ জেনেটিক বলে মনে করা হয়।
চিকিৎসকেরা সতর্ক করেন, যদি বেঁচেও যায়, তবে উইটেন হয়তো আর কখনও হাঁটতে পারবে না এবং সারা জীবন ভেন্টিলেটর ও ফিডিং টিউবের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। অথচ মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই সে তার লিটল লিগ বেসবল টিমের এমভিপি নির্বাচিত হয়েছিল।
হতাশ না হয়ে মা কেইসি গভীর রাতে গুগলে অনুসন্ধান শুরু করেন। সেখানেই তিনি খুঁজে পান ইউটি হেলথ হিউস্টনের নিউরোসার্জন ডা. জ্যাক মর্কোসের লেখা একটি প্রবন্ধ। মর্কোস বিশেষভাবে ক্যাভারনোমা চিকিৎসায় দক্ষ। কেইসি তৎক্ষণাৎ তাঁকে ইমেল করেন। আশ্চর্যজনকভাবে দ্রুত উত্তর আসে। ডা. মর্কোস পরে জানান, “ছবিগুলো দেখে আমার মনে হয়েছিল এটি করা সম্ভব। তাই আমি বলেছিলাম, ওকে হিউস্টনে নিয়ে আসুন।”
উইটেনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে হিউস্টনে আনা হয়। সেখানে ডা. মর্কোস ও শিশু নিউরোসার্জন ডা. মানীশ শাহ চার ঘণ্টার এক জটিল অস্ত্রোপচার চালান। বিস্ময়করভাবে অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ সফল হয়। অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উইটেন আবার শ্বাস নিতে, কথা বলতে এবং সজাগ অবস্থায় ফিরতে সক্ষম হয়।
মাত্র ছয় সপ্তাহ পর সে বাড়ি ফিরে আসে এবং নিজের সপ্তম জন্মদিন উদযাপন করে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা শুরু করার পাশাপাশি আবার মাঠে বেসবল খেলতেও ফিরেছে। উইটেন তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “ডা. মর্কোস ও ডা. শাহকে ধন্যবাদ, আমাকে আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।” ডা. শাহ হাসতে হাসতে বলেন করেন, “আমরা শুধু শর্ত দিয়েছিলাম আবার মাঠে নামলে আমাদের ছবি পাঠাতে হবে।”
কেইসি ড্যানিয়েল জানান, এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তিনি কোনওদিন ভুলবেন না। তবে যেটা তিনি সারাজীবন মনে রাখবেন, তা হল একটি সাধারণ গুগল সার্চই তাঁর ছেলেকে নতুন জীবন দিয়েছে।
