আজকাল ওয়েবডেস্ক: সন্তানের জন্ম দিয়েছেন মা। তার পরেই তাঁকে জানানো হয়েছে, সেই সন্তান আর বেঁচে নেই। ব্যাস এটুকুই। এর বেশি কোনও তথ্যও নেই। সেই সন্তানকে সমাধিস্থ করা হবে কীভাবে, তার কোনও ব্যবস্থা নেই। পরিবারের লোকজনকে কোনও খবর দেওয়া নেই। একদিন, দু’ দিন, এক বছর, বছরের পর বছর একই ঘটনা। বারে বারে। ওই এক জায়গাতেই শয়ে শয়ে মা’ কে জানানো হয়েছে, বেঁচে নেই আর তাঁদের সন্তান। সত্যিটা কী? বহুবছর পর, একদিন নারকীয় ঘটনার সত্যি এসেছে সামনে। পরিবার এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে বছরের পর বছর ধরে নানা অভিযোগ পেয়ে, চাপের মুখে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি ওই বিশেষ জায়গা খনন করতে শুরু করেন।
জায়গাটি হল, আয়ারল্যান্ডের টুয়ামে সেন্ট মেরি'স মাদার অ্যান্ড বেবি হোম। সূত্রের খবর, বছরের পর বছর ধরে, সেখানে অন্তত আটশ শিশুকে স্রেফ সেপটিক ট্যাঙ্কে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বন সিকোর্স সিস্টার্স ওই বেবি হোম পরিচালনা করেন। ৮০ বছর আগে মেরি মার্গারেট সেখানেই মারা যান। বারে বারে এই হোম নিয়ে নানা অভিযোগ, ধোঁয়াশার কথা উঠে এসেছে।
ঘটনা আরও প্রকাশ্যে আসে, এক মহিলার জোর দাবিতে। তিনি জানিয়েছিলেন, বহু বছর আগে ওই হোম থেকে জানানো হয় তাঁর সদ্যোজাত বোনের মৃত্যু হয়েছে। তারপর আর কোনও খোঁজ দেওয়া হয়নি। তাঁর এক মাত্র ইচ্ছে বোনকে সমাধিস্থ করার, পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে। শুরু হয় প্রায় আট দশক আগে মারা যাওয়া বোনের খোঁজ।
আরও পড়ুন: আর অনৈতিক নয়! সঙ্গীর লুকিয়ে ফোনকল রেকর্ডই প্রমাণ বিচ্ছেদ মামলার? বড় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল আদালত...
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা, ৭১ বছর বয়সী অ্যানেট ম্যাককে ছোটবেলা থেকেই জানতেন যে, তাঁর এক বড় বোন ছিল, যে একেবারে শিশু অবস্থায় মারা গিয়েছে। সেই তথ্যের বিস্তারিত খোঁজে এসে তাকে এই সত্যের মুখোমুখি হতে হবে তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি তার আগে পর্যন্ত কোনওভাবেই জানতেন না, সন্ন্যাসিনীরা তার বড় বোনকে গণকবরে সমাহিত করেছেন।
ঘটনার মোর করে, ম্যাককে মা হওয়ার পর। মিসেস ম্যাককে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর খবর দিয়েছিলেন তাঁর মা ম্যাগি ও'কনরকে। জানাতে যে, তিনি দিদা হয়েছেন। সেদিন আনন্দের বদলে মায়ের চোখে দুঃখ, কষ্ট দেখেন তিনি। তখনই উঠে আসে তাঁর বড় বোনের প্রসঙ্গ।

জানান ১৯৪৩ সালের জুন মাসের এক ঘটনার কথা, যা তিনি চাপা রেখেছিলেন দীর্ঘ সময়। ও'কনরকে তখন একজন অবিবাহিত কিশোরী। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর, সন্ন্যাসীনীরা তাঁকে জানিয়েছিলেন সন্তান আর বেঁচে নেই। তার কোনও মর্যাদাপূর্ণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরিকল্পনা করা হয়নি। মিসেস ও'কনর পরে ইংল্যান্ডে চলে যান, যেখানে তার আরও ছয়টি সন্তান হয় এবং তিনি একটি সুন্দর জীবনযাপন করেন। কিন্তু প্রথম সন্তানের মৃত্যু তিনি ভোলেননি এক মুহূর্তের জন্য। সেখান থেকেই শুরু হয় খোঁজ।
এই প্রসঙ্গেই সামনে এসেছে সেখানকার সমাজব্যবস্থার আরও একটি সত্যি। তা হল, বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে গর্ভবতী মেয়ে এবং অবিবাহিত মহিলাদের গোপনে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য টুয়াম প্রতিষ্ঠান সহ বেহস্কিছু হোম-এ নিয়ে যাওয়া হত। জন্মের পর প্রায়ই জোর করে মায়ের কাছ থেকে শিশুদের কেড়ে নেওয়া হত। মায়েরা কখনও জানতেই পারতেন না কী হয়েছে সেসব শিশুর সঙ্গে। জানা যায়, বহু শিশুকে মেরে ফেলা হত। কাউকে কাউকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্য দেশে।
