আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১২ হাজার বছর পর জেগে উঠেছে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি। রবিবার এত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এর ফলে আগ্নেয়গিরির ছাই এবং সালফার ডাই অক্সাইডের ঘন কুণ্ডলী আকাশে ১৫ কিলোমিটার (প্রায় ৯ মাইল) উঁচু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ছাই লোহিত সাগর পেরিয়ে ইয়েমেন ও ওমানে ছড়িয়ে পড়ে এবং অবশেষে চীন ও প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ার আগে উত্তর ভারতে পৌঁছেছে।
হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ছাইয়ের স্তূপ ১৫ কিলোমিটার (প্রায় ৯ মাইল) উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছ। প্রথমে অগ্ন্যুৎপাতের বিস্ফোরণের প্রবল ধাক্কায় ছাই উঠে যায় ১৫ হাজার ফুট থেকে ৪৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উচ্চতায়। এরপর প্রাথমিক ভাবে তীব্র উচ্চ-স্তরের বাতাস ইথিওপিয়ার ছাইকে ভাসিয়ে নিয়ে লোহিত সাগরের উপর দিয়ে। তা ভেসে যায় ইয়েমেন ও ওমেনের দিকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা বাতাসের ধাক্কায় অভিমুখ বদলে ভাসতে থাকে আরব সাগরের উপরে। ছাইটি পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার আগে গুজরাট এবং রাজস্থানের মতো পশ্চিমাঞ্চল হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করেছিল।
এমিরেটস অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির চেয়ারম্যান এবং আরব ইউনিয়ন ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেসের সদস্য ইব্রাহিম আল জারওয়ান জানিয়েছেন যে, বিমান কর্তৃপক্ষ বিমানের ইঞ্জিনের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে। ছাইয়ের মেঘের কারণে লোহিত সাগর এবং আরব উপদ্বীপের উপর দিয়ে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত, ডাইভার্ট বা বাতিল করা হয়েছে।
ইথিওপিয়ার হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি থেকে বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরির ছাই নির্গত হওয়ার কারণে, ভারত এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিমান যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে, আকাসা এয়ার ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে জেদ্দা, কুয়েত এবং আবুধাবিতে তাদের সমস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে।
ওমান পরিবেশ কর্তৃপক্ষ সোমবার নিশ্চিত করেছে যে ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় আরব সাগরের কিছু অংশে আগ্নেয়গিরির ছাই শনাক্ত করা হয়েছে। জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব হবে না।

স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে সালফার ডাই অক্সাইডের নির্গমন জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদি আগ্নেয়গিরির গ্যাসগুলি আর্দ্রতার সঙ্গে মিশে যায় অ্যাসিড বৃষ্টিও হতে পারে। এছাড়াও আগ্নেয়গিরির ছাই সাধারণ ধুলোর মতো নয়। শিলার গুঁড়ো, কাচ, অ্যাসিডিক যৌগ এবং সালফার ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত, সূক্ষ্ম ছাই ফুসফুসে জ্বালাপোড়া করতে পারে, হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসকে আরও খারাপ করতে পারে এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুসারে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে ছড়িয়ে থাকা ছাইয়ের মেঘ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ছাইয়ের স্তর উপরের বায়ুমণ্ডলে আরও উপরে উঠবে, যেখানে সূক্ষ্ম কণাগুলি কয়েক দিন ধরে উপক্রান্তীয় জেট স্ট্রিম ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হবে।
ভারতের জয়পুর, জামনগর, দিল্লি-এনসিআর, এছাড়াও হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিম মহারাষ্ট্রে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ছাইয়ের মেঘের কারণে দিল্লির বাতাসের মানের বড় ধরনের অবনতির সম্ভাবনা কম। তবে, ছাইয়ের মেঘ মাথার উপর দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ আরও অন্ধকার এবং কুয়াশাচ্ছন্ন দেখাতে পারে।
আগ্নেয়গিরির ছাই শীঘ্রই ভারত ছেড়ে চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে উপরের বায়ুমণ্ডলে সূক্ষ্ম কণার কারণে এটি প্রভাবিত অঞ্চলে রঙিন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত তৈরি করতে পারে।
