আজকাল ওয়েবডেস্ক: জীবন কখন কোন দিকে মোড় নেয়, কখন কাকে কীভাবে চমকে, তা আগে থেকে কেউ টের পান না। যেমন পিটসবার্গের এক প্রৌঢ়া। জীবন তাঁকে আবারও চমকে দিল। কিশোরী বেলায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সন্তানটিকে আর নিজের কাছে রাখেননি। দত্তক নেওয়ার জন্য দিয়েছিলেন। সেই সন্তান কয়েক দশক পর চমকে দিল তাঁকে।
জানা গেছে, ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রৌঢ়া। অ্যাথলেটের পোশাক পরেছিলেন। ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার আগে ওয়ার্ম আপ করছিলেন। সেই সময় তাঁর সন্তান মুখোমুখি দাঁড়ান। যে ছেলেকে তিনি ৩০ বছর ছেড়ে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আর চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে আসলে ২০১৮ সালে। পিট্সবার্গে মা ও ছেলের এমন মিলনের কাহিনিতে শোরগোল পড়েছিল গোটা শহরে। জানা গেছে, যুবতীর নাম স্টেসি ফিক্স। জীবনের অন্যতম কঠিন সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হয়েছিল কিশোরীবেলায়। তখন স্টেসির বয়স ছিল ১৫ বছর। হঠাৎ একদিন টের পান তিনি অন্তঃসত্ত্বা। গর্ভপাত করার সাহস এবং সময় কোনওটাই ছিল না তাঁর কাছে।
তাই সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই, সদ্যোজাতকে দত্তক নিতে কাউকে দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই সময় সন্তানকে বড় করে তোলার মতো ক্ষমতাও ছিল না তাঁর। সেই সময় ওহিওর এক দম্পতি তাঁর সন্তানকে দত্তক নেন। সন্তানের নাম দেন, স্টিফেন স্ট্রন। ধীরে ধীরে সেই পরিবারেই বেড়ে ওঠেন স্টিফেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করেন।
পরিবারের সঙ্গে সখ্য থাকলেও, তাঁর জন্মদাত্রী কে তার সবসময় জানতে চাইতেন স্টিফেন। বছরের পর বছর তিনি আসল মাকে খুঁজে যান। কিন্তু প্রতিবার বিফল হন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে আরও জানা গেছে, স্টিফেনের বার্থ সার্টিফিকেট বন্যার জলে ভেসে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে দেশে একটি নতুন আইন চালু হয়। যে আইন অনুযায়ী, দত্তক নেওয়া সন্তানরা নতুন করে বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আসল মায়ের নাম উল্লেখ করতে হবে।
এরপরই জন্মদাত্রীর খোঁজ পান স্টিফেন। ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল স্টেসির খোঁজ পান তিনি। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মায়ের যেতে চাননি। বরং আসল মাকে চমকে দিতে চেয়েছিলেন। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, স্টেসি রেড হোয়াইট ব্লুর সদস্য। স্টেসি ওই দলের হয়ে হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। স্টিফেন ওহিওর এক দলের সংগঠন ছিলেন। সেই পরিচয় দিয়ে মায়ের দলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বিষয়টি তিনি ওই দলের প্রেসিডেন্টকে জানান। এও জানান, মাকে তিনি চমকে দিতে চান। এমনকী তাঁর বোন এই বিষয়ে তাঁকে সাহায্য করেন। জানা গেছে, সেদিন ম্যারাথনে স্টেসিকে ঘিরে ধরেন উপস্থিত দর্শকরা। তখন তাঁর হাতে একটি চিঠি তুলে দেওয়া হয়।
ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ১৩ হাজার ৭৫ দিন আগে তিনি শেষবার তাঁকে দেখেছেন। তখন এককোণে লুকিয়ে ছিলেন স্টিফেন। চিঠি পড়তে পড়তেই কেঁদে ফেলেন স্টেসি। মাঠের আশেপাশে খুঁজতে থাকেন ছেলেকে। তখনই স্টিফেনকে সেই কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ৩৫ বছর পর ছেলেকে প্রথমবার জড়িয়ে ধরেন স্টেসি। উপস্থিত দর্শকেরাও আবেগপ্রবণ হয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
