আজকাল ওয়েবডেস্ক: কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সিনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেন অভিযোগ করেছেন যে থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকায় রাতের অন্ধকারে “ভূতের মতো” ভয়াবহ শব্দ সম্প্রচার করছে। এই ঘটনাকে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের (psychological warfare) অংশ বলে দাবি করেছে কম্বোডিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

কমিশনের তরফে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভল্কার টার্কের কাছে পাঠানো ১১ অক্টোবরের একটি চিঠি প্রকাশ করেন হুন সেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে “উচ্চমাত্রার, তীক্ষ্ণ ও আতঙ্কজনক শব্দ” সম্প্রচার করছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ অক্টোবর থেকে থাই সামরিক বাহিনী সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর কাছে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে শিশুদের কান্নার আওয়াজ, কুকুরের হাহাকার, লোহার চেইনের ঝনঝনানি ও হেলিকপ্টারের গর্জনের মতো শব্দ প্রচার করছে। এই শব্দগুলো “দীর্ঘ সময় ধরে, উচ্চ তীব্রতায়” প্রচারিত হচ্ছে, যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘুমাতে পারছেন না, মানসিক উদ্বেগে ভুগছেন এবং শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করছেন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু, প্রবীণ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষ।

আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়াতে নয়াদিল্লির পুতুল হয়ে কাজ করছে কাবুল’, শান্তি বৈঠক ভেস্তে যেতেই হাওয়ায় কথা ছুঁড়ছেন খোয়াজা আসিফ

কমিশনের অভিযোগ, এই ধরনের মানসিক নির্যাতন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং যুদ্ধবিরতির পরিপন্থী। থাই সরকার এখনো এই অভিযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি।

এই অভিযোগ এমন এক সময়ে উঠেছে যখন কয়েক মাস আগেই দুই দেশ পাঁচ দিনের সংঘর্ষের পর “শর্তহীন যুদ্ধবিরতি”তে সম্মত হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছিল এবং দুই লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল। তখন দুই পক্ষই ভারী গোলাবর্ষণ চালিয়েছিল প্রাচীন মন্দিরসমৃদ্ধ এক বিতর্কিত এলাকা নিয়ে।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডও কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছিল যে কম্বোডিয়ান বাহিনী সীমান্তে নতুন করে স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। জুলাই মাসে মাইন বিস্ফোরণে ছয় জন থাই সেনা আহত হওয়ার পরই উত্তেজনা বাড়ে। তবে কম্বোডিয়ার দাবি, সেগুলো নতুন করে পোঁতা মাইন নয়, বরং অতীতের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের পুরনো মাইন, যা আজও অনাবিষ্কৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

দুই দেশের মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্তের বেশ কিছু অংশ এখনো অনির্ধারিত। ১৯০৭ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকালে তৈরি করা মানচিত্রই এই সীমান্ত নির্ধারণের ভিত্তি, যা নিয়ে শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলছে।

বর্তমানে সীমান্তে শান্তি বজায় থাকলেও, “ভূতের শব্দ” প্রচারের মতো এই নতুন ঘটনা আবারও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সম্পর্ককে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের ভাষায়, “এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন শুধু সীমান্তবাসীদের মানবাধিকারের পরিপন্থী নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন সংঘাতের আশঙ্কাও সৃষ্টি করছে।”