আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিম জার্মানির শান্ত শহর শোপিংগেনে সকালে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক ঘটনা। তিন যুবক মিলে একটি কন্ডোম বিক্রয়কারী স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (ভেন্ডিং মেশিন) বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লুট করার চেষ্টা করে। কিন্তু এই অপরাধী কর্মকাণ্ড এক গভীর ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়—কারণ বিস্ফোরণের সময় উড়ে আসা ধাতব টুকরোর আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারাত্মকভাবে আহত হন তাদের এক সঙ্গী। পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই ২৯ বছর বয়সী যুবকের।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বড়দিনের সকালে শোপিংগেন শহরের এক নির্জন রাস্তায় এই ঘটনা ঘটে। শহরটি নেদারল্যান্ডস সীমান্তের কাছেই অবস্থিত। তিন যুবক একটি কন্ডোম ভেন্ডিং মেশিন চুরি করার উদ্দেশ্যে সেটিতে বিস্ফোরক বসিয়ে ফাটিয়ে দেয়। বিস্ফোরণের আগে তারা গাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে যিনি নিহত হন, তিনি সঠিকভাবে গাড়ির দরজা বন্ধ করতে পারেননি এবং ফলস্বরূপ একটি ধাতব টুকরো সজোরে এসে তাঁর মাথায় লাগে।
তৎক্ষণাৎ ওই দুই সঙ্গী আহত যুবককে গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তারা বলে, তাদের বন্ধু সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অজুহাতে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে ওই দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং একপর্যায়ে তাদের একজন পুরো ঘটনা স্বীকার করে। সে জানায়, তারা একটি কন্ডোম ভেন্ডিং মেশিন ফাটিয়ে টাকা ও পণ্য চুরি করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু বিস্ফোরণের সময় তাদের সঙ্গী ঠিকমতো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে না পারায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: তবলিঘি জামাত: ‘করোনা জেহাদ’ থেকে আদালতের অব্যাহতি — ধর্মীয় উন্মত্ততার কালো অধ্যায় ফের প্রশ্নের মুখে
বিস্ফোরণের ফলে ভেন্ডিং মেশিনটির ছিন্নভিন্ন অংশ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়। ছড়িয়ে পড়ে ভেতরের কন্ডোম, টাকা এবং অন্যান্য অংশ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরে কাউকে মেশিন থেকে কিছু নিতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ, মূল উদ্দেশ্য পূরণ না করেই ঘটেছে মৃত্যু। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এই ঘটনাকে ঘিরে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। দুই বেঁচে যাওয়া অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরবর্তীতে তারা প্রাথমিকভাবে জামিনে ছাড়া পায়। তবে তদন্ত এখনও চলছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞ এবং ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্ফোরণের ধরন ও উপকরণ বিশ্লেষণ করছে।
একজন পুলিশ আধিকারিক বলেন, “এটি একটি অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক ঘটনা। চুরি করতে গিয়ে একজন তরুণের এইভাবে প্রাণ হারানো নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কতটা বিপজ্জনক, এই ঘটনা তার বড় উদাহরণ।” স্থানীয় নাগরিকদের অনেকেই ঘটনায় হতবাক। এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের মতো শান্ত ছোট শহরে এধরনের ঘটনা কল্পনাও করিনি। যেখানে সবাই পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছে, সেখানে কেউ এরকম অপরাধে জড়িয়ে পড়বে, ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।”
জার্মানিতে বহু বছর ধরেই কন্ডোম ভেন্ডিং মেশিন রাস্তাঘাট, পাবলিক টয়লেট, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও দেখা যায়। নাগরিকদের গোপনীয়তার সুবিধার্থে এই মেশিনগুলো খুবই জনপ্রিয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এগুলোর ওপর চুরির চেষ্টা কিছুটা বাড়ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজে নৈতিকতা ও তরুণদের দিশাহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আইন লঙ্ঘনের এমন বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী পরিণতির দৃষ্টান্ত সমাজকে সতর্কবার্তা হিসেবে ভাবতে অনেকে আহ্বান জানাচ্ছেন।
নিহত যুবকের নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ময়নাতদন্তের পর তার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে—যেমন বেআইনি বিস্ফোরণ ঘটানো, চুরি, এবং মৃত্যুর জন্য দায়িত্বশীলতা। জার্মানির এই ছোট শহরে যেভাবে একটি ব্যর্থ অপরাধ ও অকাল মৃত্যুতে মোড় নিল, তা শুধু আইন-শৃঙ্খলার নয়, সমাজের নৈতিকতারও এক গভীর সংকেত।
