আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানুষের মতো নয়, ব্যাঙ ও অন্যান্য উভচর প্রাণীদের শ্বাস নিতে ফুসফুসের উপর নির্ভর করতে হয় না। তাদের অনন্য ত্বক অক্সিজেন গ্রহণ ও জল পান করার কাজেও সহায়তা করে। কিন্তু কীভাবে ব্যাঙ তাদের ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস নেয় ও জল পান করে?
ব্যাঙের ত্বক জটিল। এটি পাতলা, শ্লেষ্মা-উৎপাদনকারী গ্রন্থি দিয়ে আচ্ছাদিত যা ত্বককে আর্দ্র রাখে, এবং এতটাই ছিদ্রযুক্ত যে তাতে বাতাসের অণুগুলো সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এদের ত্বকের নিচেই থাকে ছোট রক্তনালির এক জাল যা সরাসরি জল বা বাতাস থেকে অক্সিজেন শোষণ করে এবং একইসঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে cutaneous respiration বা ত্বক-শ্বাস। ব্যাখ্যা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ কানেকটিকাটের বিবর্তন জীববিজ্ঞানী কার্ট শভ্যেঙ্ক, যিনি ব্যাঙ ও ব্যাঙাচির শ্বাস-প্রক্রিয়ার ওপর গবেষণা করেছেন।
যদিও ব্যাঙ ফুসফুস এবং মুখগহ্বরের আবরণ দিয়েও শ্বাস নিতে পারে, তবুও cutaneous respiration ব্যাঙদের জলের নিচে বেঁচে থাকা ও দীর্ঘ সময় হাইবারনেট (শীতনিদ্রা) করতে সহায়তা করে। শভ্যেঙ্ক বলেন, “প্রচেষ্টা ছাড়াই, শুধু আর্দ্র ত্বক এবং তাতে রক্তনালির উপস্থিতি থাকলেই গ্যাস ও জল বিনিময় হতে থাকবে, তারা চাইলেও থামাতে পারবে না।” তবে সব ব্যাঙ একভাবে এই প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে না।
আরও পড়ুন: ভারতে ফের বার্ড ফ্লু-র হানা, কোন ১০ টি রাজ্যে জারি করা হল সতর্কতা
অন্যদিকে, ব্যাঙাচিদের এখনও পূর্ণাঙ্গ ফুসফুস বা গিল নেই। তাই বেঁচে থাকতে হলে তাদের জলপৃষ্ঠ থেকে বাতাস টেনে নিতে হয়। কিন্তু যখন তারা সদ্য ফুটে বেরোয়, তখন এতটাই ক্ষুদ্র থাকে যে জলের পৃষ্ঠতলের টান ভাঙতে পারে না। তাই তারা নিজেদের বাতাসের বুদ্বুদ তৈরি করে। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় শভ্যেঙ্ক ও তাঁর সহকর্মী দেখেন, ব্যাঙাচি জলপৃষ্ঠের একদম নিচে সাঁতরে গিয়ে দ্রুত বাতাস টেনে নেয়, একটি বুদ্বুদ তৈরি করে এবং সেই বুদ্বুদকে তাদের ফুসফুসে ঠেলে দেয়।
ব্যাঙের ছিদ্রযুক্ত ত্বকই তাদের জল পান করার উপায়। শভ্যেঙ্ক বলেন, “জল ত্বকের সমস্ত ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে, তারপর তা কোষঝিল্লি পেরিয়ে কোষে ও রক্তপ্রবাহে শোষিত হয়।” অনেক ব্যাঙের শরীরে এমনকি “drinking patch” নামে পরিচিত একটি বিশেষ অঞ্চল থাকে, যা অত্যন্ত রক্তবাহিত এবং জল শোষণে অত্যন্ত কার্যকর।
শুষ্ক অঞ্চলে পাওয়া কিছু ব্যাঙ — যেমন trilling frog বা অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে বসবাসকারী water-holding frog বর্ষাকালে জল শোষণে খুবই দক্ষ।
র্যা ক্সওয়ার্দি বলেন, “তারা শরীরে জল সঞ্চয় করে, তারপর গর্তে বা মাটির নিচে চলে যায়, এমনকি নিজেদের চারপাশে অতিরিক্ত এক স্তরের শ্লেষ্মা তৈরি করে। এই সংরক্ষিত জল দিয়েই তারা পরবর্তী বৃষ্টিপাত পর্যন্ত মাসের পর মাস বা এমনকি বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে।”
তবে, এই চমৎকার ত্বক-ভিত্তিক শ্বাস-প্রক্রিয়া ও জলপানের সুবিধা এক ভয়াবহ ঝুঁকিও তৈরি করে। ত্বকের ছিদ্রযুক্ত প্রকৃতি ব্যাঙ ও অন্যান্য উভচর প্রাণীদের পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাঙের ত্বকের এই ছিদ্রতা তাদের সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংস্পর্শে নিয়ে আসে।

এছাড়াও, ব্যাঙদের জীবিত থাকার জন্য ত্বক আর্দ্র রাখতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়তে থাকা খরা ও উষ্ণতা তাদের বাসস্থান সংকুচিত করে তুলতে পারে, বিশেষ করে আমাজন রেইনফরেস্ট এবং ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের আটলান্টিক রেইনফরেস্টে।
র্যা ক্সওয়ার্দি বলেন, “উভচর প্রাণীরাই সাধারণত প্রথম বিলুপ্ত বা হ্রাস পেতে শুরু করে, আর সেটিই পরিবেশে কোনও বড় সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।” ব্যাঙ হারিয়ে গেলে প্রকৃতির খাদ্যজালে ভারসাম্য নষ্ট হয়, কারণ তারা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এবং নিজেরাও সাপ ও পাখিদের খাদ্য। ভবিষ্যতই বলে দেবে কিছু ব্যাঙের প্রজাতি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে কি না। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জীববিজ্ঞানের মূল প্রশ্নই হল প্রতিটি প্রজাতি, যাদের মধ্যে আমরাও আছি, কী এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের গতি প্রাণীদের অভিযোজনগত পরিবর্তনের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত।
