আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমান বিশ্বের আকাশসীমা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দখলে রেখেছে স্টেলথ ফাইটার, উন্নত যুদ্ধবিমান ও অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ একটি যুদ্ধবিমানও পরিচালনা করে না। ভৌগোলিক অবস্থান, নিরপেক্ষ নীতি, সামরিক জোটের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে এই দেশগুলো নিজেদের আকাশসীমা রক্ষা করে। এই তালিকা দেখায়—যুদ্ধবিমান ছাড়াও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব, যদি শক্তিশালী মিত্রতা, সুসংগঠিত কূটনৈতিক অবস্থান ও সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে।


আইসল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম অনন্য উদাহরণ। দেশের কোনো স্থায়ী সেনাবাহিনী নেই, যুদ্ধবিমানও নেই। ঠান্ডাযুদ্ধের সময় থেকেই আইসল্যান্ডের আকাশ প্রতিরক্ষা নির্ভর করে ন্যাটো সদস্যদের ওপর। ন্যাটো দেশগুলো পর্যায়ক্রমে কেফলাভিক ঘাঁটিতে ফাইটার জেট মোতায়েন করে আইসল্যান্ডের আকাশসীমা ও বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল সুরক্ষিত রাখে। কয়েক দশক ধরে চলা এই মডেলই দেশটির প্রধান প্রতিরক্ষা ভিত্তি।


লুক্সেমবার্গও একইভাবে নিজস্ব ফাইটার জেট বহর তৈরি করেনি। দেশটি ন্যাটো কাঠামোর মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে অবদান রাখে মূলত সক্ষমতা-বিনিয়োগ, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং যৌথ সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। তাই আকাশসীমা রক্ষার দৈনন্দিন কাজটি প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরই ন্যস্ত।


আয়ারল্যান্ডের এয়ার কর্পস হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান ও টহল বিমানের ওপর নির্ভরশীল। কয়েক দশক ধরেই দেশটির কাছে কোনো জেট ফাইটার নেই। আয়ারল্যান্ড তার সীমিত প্রতিরক্ষা সামর্থ্যকে কেন্দ্রীভূত করেছে সাগর টহল, সন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর। আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফাইটার জেট কেনার প্রশ্ন সামনে এলেও এখনো দেশটির কাছে কোনো যুদ্ধবিমান নেই।


দক্ষিণ এশিয়ার ভুটানও একই অবস্থানে। পাহাড়ঘেরা দেশের প্রতিরক্ষা নীতি বহুদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বিত। ভারত প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম এবং সুস্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে। দেশটির ভৌগোলিক পরিস্থিতি ও নীতি বিবেচনায় স্বাধীন যুদ্ধবিমান বাহিনী গড়ে তোলা বাস্তবসম্মতও নয়।


মালদ্বীপের ক্ষুদ্র বিমান শাখা মূলত পরিবহন ও নজরদারিতে ব্যবহৃত হয়। দেশটির কোনো জেট ফাইটার নেই। কিছু বিমানের ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষিত পাইলটের ঘাটতি রয়েছে। ভারতসহ আঞ্চলিক মিত্ররা মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন ও সমুদ্র নজরদারিতেই সহায়তা দেয়; যুদ্ধবিমান গড়ে তোলার মতো কাঠামো তৈরি হয়নি।


লাতিন আমেরিকার কোস্টা রিকা ১৯৪৯ সালে সেনাবাহিনী বাতিল করে এবং সেই সিদ্ধান্ত দেশটির সংবিধানে লিপিবদ্ধ করে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা। যুদ্ধবিমান সংগ্রহ বা রক্ষণাবেক্ষণের মতো ব্যয়বহুল সামরিক প্রয়োজনীয়তা দেশটির জন্য অগ্রাধিকার নয়।


পানামা ১৯৮৯ সালের পর তাদের পুরনো সামরিক কাঠামো ভেঙে ফেলেছে। এরপর আর কোনো প্রচলিত যুদ্ধবিমান বাহিনী গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে দেশটির অ্যারোনাভাল পরিষেবা মূলত হালকা আক্রমণ বিমান, নজরদারি ও উপকূল টহলবিমান ব্যবহার করে। দ্রুতগতির ফাইটার স্কোয়াড্রন গঠনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।


এই উদাহরণ প্রমাণ করে—জাতীয় নিরাপত্তা মানেই বড় আকারের যুদ্ধবিমান বহর নয়। কৌশলগত অবস্থান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, মিত্র দেশগুলোর নিরাপত্তা ছাতা এবং দক্ষ নীতি—এসবের সমন্বয়ে যুদ্ধবিমান ছাড়াই অনেক দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে পেরেছে এবং সফলভাবে আকাশসীমা পরিচালনা করছে।