আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের মেরঠে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় গুরুতর গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, একটি ছোট শিশুর রক্তাক্ত ক্ষত সেলাই না করে মাত্র ৫ টাকার ফেভিকুইক ব্যবহার করে ক্ষত বন্ধ করে দেন চিকিৎসক। ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিশুটির পরিবার। ইতিমধ্যে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কি ঘটেছিল সেই দিন?
জাগৃতি বিহারের অভিজাত আবাসনে বসবাসকারী সরদার জসপিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর ছোট ছেলে বাড়িতে খেলতে খেলতেই টেবিলের কোণায় মাথা ঠুকে গুরুতরভাবে জখম হয়। মাথা থেকে রক্ত পড়তে থাকায় পরিবার দ্রুত তাকে জাগৃতি বিহারের ভ্যাগ্যশ্রী হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানেই অভিযোগের সূত্রপাত। পরিবার জানায়, ডিউটি ডাক্তার শিশুর ক্ষত দেখে কোনও সেলাই বা চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ না করে তাঁদের বাজার থেকে ৫ টাকার একটি ফেভিকুইক টিউব কিনে আনতে বলেন। এরপর সেই ফেভিকুইক দিয়েই শিশুর মাথার ক্ষত সিল করে দেন। এতে প্রচণ্ড ব্যথায় কাঁদতে থাকে শিশু। জসপিন্দর সিংহের বক্তব্য, “ডাক্তার বারবার বলছিলেন বাচ্চা শুধু ভয় পেয়েছে, ব্যথা কমে যাবে। কিন্তু সারারাত শিশুটি ব্যথায় কাতরাচ্ছিল।”
পরদিন অন্য হাসপাতালে প্রকাশ পেল ভয়াবহ অবস্থা। ব্যথা না কমায় পরিবার পরের দিন সকালে শিশুটিকে নিয়ে যায় লোকেপ্রিয়া হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে যান। ক্ষতস্থানে শক্ত হয়ে বসে থাকা ফেভিকুইক সরাতে তাঁদের প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়। আঠা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার পর শিশুটির মাথায় চারটি সেলাই দিতে হয়।
চিকিৎসকদের মতে, ফেভিকুইকের রাসায়নিক উপাদান ত্বকে জ্বালা, জ্বালা-যন্ত্রণা, এবং স্নায়ু ক্ষতিও করতে পারে। পরিবারের আশঙ্কা, যদি আঠা শিশুটির চোখে ঢুকে যেত, তাহলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারত।
ঘটনার পর ক্ষুব্ধ পরিবার সরাসরি অভিযোগ জানায় মিরাটের মুখ্য চিকিৎসা কর্মকর্তার দপ্তরে। মিরাটের সিএমও ড. অশোক কাটারিয়া জানিয়েছেন, “এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” পরিবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখবে—চিকিৎসক কি মানক চিকিৎসা প্রোটোকল ভঙ্গ করেছেন? বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন কি না? শিশুর চিকিৎসায় জীবনহানি বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল কি না?
জসপিন্দর সিংহের বক্তব্য, “একজন ডাক্তার কীভাবে একটি ছোট বাচ্চার মাথার ক্ষতে ফেভিকুইক ব্যবহার করতে পারেন, এটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আমরা চাই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে এমন গাফিলতি আর কারও সঙ্গে না ঘটে।”
এই ঘটনা সামনে আসতেই স্থানীয় মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মান নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি কতটা কার্যকর? তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও হাসপাতাল প্রশাসন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
