আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক ট্রিলিয়ন ডলার। এই অঙ্কের বিশালতা বোঝাতে গেলে বলা যায়, এটি ১৭০টিরও বেশি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের চেয়ে বেশি—যার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, কাতার ও নিউজিল্যান্ডের মতো ধনী দেশও। এমনকি হাঙ্গেরি, কাতার, পেরু, নাইজেরিয়া ও কুয়েত—এই পাঁচ দেশের ২০২৪ সালের GDP যোগ করলেও তা এক ট্রিলিয়ন ডলারের সমান হয় না।
আর এই অর্থটাই হতে পারে টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের সম্ভাব্য ‘বেতন’—শেয়ার ও স্টক অপশনের আকারে, যা তাঁর বর্তমান ১৩ শতাংশ শেয়ার মালিকানা প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে পারে। বৃহস্পতিবার টেক্সাসে টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের সভায় সেই ঐতিহাসিক ভোট হতে যাচ্ছে। ভোটের ফলাফল মাস্ককে ইতিহাসের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার বানাতে পারে।
কিন্তু এই বিপুল অঙ্কের পারিশ্রমিক নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমতা ও ন্যায্যতার প্রশ্ন তুলে অনেকে বলেছেন, যুদ্ধ, খরা, দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধিতে জর্জরিত এক পৃথিবীতে এমন ‘অবর্ণনীয়’ পরিমাণ অর্থের বণ্টন নৈতিকতার পরিপন্থী।
২০২১ সালে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা নির্মূল করতে বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন—মোটে ৪০০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, মাস্কের সম্ভাব্য প্যাকেজের অর্ধেক টাকাতেই পৃথিবী থেকে ক্ষুধা দূর করা সম্ভব।
সমালোচকরা বলছেন, মাস্ক ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক। অন্যদিকে, ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১০ জন ধনকুবেরের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এসব পরিসংখ্যান বৈষম্যের ভয়াবহ মাত্রা তুলে ধরে—যেখানে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, আর দারিদ্র্যের হার স্থবির হয়ে আছে।
টেসলার যুক্তি অবশ্য ভিন্ন। তাদের মতে, এই প্যাকেজ মাস্কের “অপরিহার্য ভূমিকা”র স্বীকৃতি, যার লক্ষ্য আগামী এক দশকে কোম্পানির বাজারমূল্য ৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো এবং সর্বোচ্চ ৪০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।
২০২৪ সালে অক্সফ্যাম পূর্বাভাস দিয়েছিল—দশকের মধ্যেই বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার জন্ম নেবে। এক বছর পর সেই পূর্বাভাস আরও চমকে দেয়—একজন নয়, পাঁচজন ট্রিলিয়নিয়ার তৈরি হতে পারে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে ধনকুবেরদের সম্পদ ২ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে—অর্থাৎ দিনে গড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার, আর প্রতি সপ্তাহে চারজন নতুন বিলিয়নিয়ার যুক্ত হচ্ছেন।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সতর্কবার্তা বলছে, দারিদ্র্য হ্রাসের গতি গত দশকে নাটকীয়ভাবে কমেছে। মহামারির অভিঘাত তার একটি কারণ হলেও, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও নীতিগত ব্যর্থতাও এই বৈষম্যের মূল চালিকা শক্তি।
আজ বিশ্বে ধনী এক শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মোট সম্পদের ৪৫ শতাংশের বেশি, অথচ প্রায় নয় শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যের নিচে বাস করছে। এই বৈষম্য ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে ধনীদের ওপর কর আরোপের দাবি জোরালো হচ্ছে।
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, যেকোনো ব্যক্তির সম্পদ যদি ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়, তাহলে অতিরিক্ত সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করা উচিত।
এক ট্রিলিয়ন ডলারের এই বিতর্ক তাই শুধু মাস্ককে ঘিরেই নয়—এটি বিশ্বের ন্যায্যতা, নীতি ও মানবতার এক গভীর প্রশ্নও উত্থাপন করছে।
