আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে এসআইআর চালু হওয়ার পর ভিড় বাড়ছে ফোটোকপি করার দোকানে। চলতি কথায়,  যাকে জেরক্স দোকান বলা হয়। দলে দলে লোকে এসে নথিপত্র 'জেরক্স কপি' করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

গোটা রাজ্যের মতো বর্ধমানেও হচ্ছে এসআইআর। যার জেরে ভিড় বেড়েছে এই জেলার স্টুডিও এবং জেরক্সের কেন্দ্রগুলিতেও। কার্জনগেটের কাছে সার দিয়ে গোটাকয়েক ফোটোকপি করার দোকান আছে। আদালত চত্বরে এবং জিটি রোডের উপরে রয়েছে জেরক্সের দোকান। প্রত্যেকেটি দোকানের কর্মীরা এখন প্রতিদিনের কাজের পরেও অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। 

জানা গিয়েছে,  সকাল ৯ টার আগে দোকান খোলা হচ্ছে। টানা ১২ ঘন্টার বেশি দোকান খুলেও কাজ শেষ হয় না। গত কয়েকদিন রাত দশটায় দোকান বন্ধ করতে হয়েছে। বেশি চালু দোকানগুলিতে তিন চারজনের বেশি কর্মচারী আছেন। তাতেও কাজ সামলানো যাচ্ছে না। 
এমনই একটা দোকানের মালিক সঞ্জয় ব্যানার্জি জানান, মূলত, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং এসআইএর ফর্মের কপি করতে আসছেন ক্রেতারা। এছাড়াও ভোটার লিস্টের কিছু পাতার প্রিন্টও নেওয়া চলছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য ডকুমেন্টও কপি করাচ্ছেন কেউ কেউ। 

অন্যদিকে একইরকম ভাবে ভিড় বাড়ছে ফোটো স্টুডিও, ডিজিটাল প্রিন্ট, সাইবার কাফেতে। সেখানে মূলত পাশপোর্ট সাইজ ফোটো আর অন্যান্য প্রিন্ট নিতে আসছেন মানুষ। বর্ধমানের এমন একটি দোকানের কর্মী সানি খানা জানান, গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের ব্যস্ততা চরমে। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেও এত ভিড় থাকে না। এবিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত করণিক কিশোর মাকর জানান, মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দোকানে লাইন দিচ্ছেন। নানা ডকুমেন্টস কপি করাচ্ছেন। তাঁর মতে,  এসবের কোনো দরকার নেই। ১২ টি রাজ্যে এসআইআর হচ্ছে। কোথাও এই ভীতি নেই। 
বিএলও বাড়ি বাড়ি যাবেন। তাঁরাই সব বলে দেবেন। আগে থেকে গোছা গোছা নথি জমানোর একেবারেই দরকার নেই।

 

এসআইআর প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যে এসআইআর আতঙ্কে একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বৃহস্পতিবার আরও এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে।  বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায়  গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক ব্যবসায়ী।  পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত ওই ব্যক্তির নাম তারক সাহা (৫৪)। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ দোকান থেকে বাড়ি ফিরে এসে একটি গাছের সঙ্গে গামছার ফাঁস গলায় বেঁধে ঝুলে আত্মঘাতী হন ওই ব্যক্তি। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে  ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। 

 

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে এসআইআর শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার মোট চারজন ব্যক্তির এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। মৃতদের মধ্যে দু'জন আত্মঘাতী হয়েছেন এবং দু'জন দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে মৃতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। 

এসআইআর শুরুর প্রথম দিনই কান্দি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগডাঙ্গা এলাকায় মোহন শেখ নামে বছর পঞ্চান্নর এক কৃষক বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন। ওই ব্যক্তির পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় মোহনের নাম না থাকায় তিনি  আতঙ্কে ছিলেন এবং  সেই কারণেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। নওদা থানার ছাতুমারা এলাকার বাসিন্দা বছর  ইসরাইল মোল্লা (৬৫) নামে এক পরিযায়ী শ্রমিক সোমবার  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেঙ্গালুরুতে মারা গিয়েছেন। মৃতের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ইসরাইলের নাম না থাকার খবর তাঁকে জানাতেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। শেষপর্যন্ত এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইসরাইলের মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর পরিবার দাবি করেছে।