আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার সেরাম অঞ্চলে ফের জোর ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬। বৃহস্পতিবার এই খবর জানাল জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস। সংস্থাটি জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মাটি থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার গভীরে, যা তুলনামূলকভাবে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত। গভীরতা বেশি হলেও এর কম্পন সেরাম ও আশপাশের এলাকায় স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। ঘটনাটি ঘটে ঠিক তার ২৪ ঘণ্টা আগে সেমেরু আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর, ফলে অঞ্চলে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। তবে ভূমিকম্পের পর কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি।
এর আগে বুধবার সেমেরু আগ্নেয়গিরি হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে উঠে এবং আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ছাইয়ের মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। ইন্দোনেশিয়ার ভলকানোলজি ও জিওলজিক্যাল ডিজাস্টার মিটিগেশন এজেন্সি জানায়, পরিস্থিতি অস্থির হওয়ায় সাধারণ মানুষকে আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে অন্তত ২.৫ কিলোমিটার দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা আরও জানায়, ছাই, পাথরের টুকরো, লাভা প্রবাহ বা আকস্মিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকায় যে কোনো মুহূর্তে বিপদ দেখা দিতে পারে। সেমেরু ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ১৩০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির একটি এবং অতীতে বহুবার অগ্ন্যুৎপাত করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত ইন্দোনেশিয়া “প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার”–এর ওপর অবস্থিত। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেট যেখানে মিলিত হয়েছে, সেই বিশাল অঞ্চলটি ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও ভূগতিশীল পরিবর্তনের জন্য কুখ্যাত। এই অঞ্চলের প্রকৃতিগত সক্রিয়তার কারণে প্রতিবছর শত শত ভূমিকম্প ও অসংখ্য আগ্নেয়গিরির স্পন্দন অনুভূত হয়। ফলে ইন্দোনেশিয়ার মানুষকে সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মাথায় রেখে জীবনযাপন করতে হয়।
অন্যদিকে একই দিনে ইউরোপীয়-মেডিটেরেনিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানায়, ইন্দোনেশিয়ার আম্বন অঞ্চল, বিশেষ করে মালুকুর রাজধানী কোট্তা আম্বনের নিকটবর্তী এলাকায় ৫.৯ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পটি মাঝারি গভীরতার ছিল বলে সংস্থাটি জানায় এবং এটি স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে আঘাত হানে। দু’টি ভূমিকম্পের সময়ানুগ অবস্থান ও কাছাকাছি কেন্দ্রবিন্দু থাকার কারণে ভূ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষকরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতি বা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেমেরুর সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাত ও ধারাবাহিক ভূমিকম্পগুলো ভূগর্ভস্থ চাপের পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যদিও এই দুটি ঘটনার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, তবু ভূতত্ত্ববিদরা সতর্ক করছেন—অঞ্চলটির অস্থির অবস্থা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
ইন্দোনেশিয়া সরকারের দুর্যোগ নিয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি জোরদার করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং জরুরি সহায়তা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে আগ্নেয়গিরির আশপাশের গ্রামগুলোতে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এই ধারাবাহিক ভূকম্পন ও অগ্ন্যুৎপাত আবারও মনে করিয়ে দেয়—পৃথিবীর সবচেয়ে ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি ইন্দোনেশিয়া, যেখানে প্রকৃতির শক্তি যে কোনো সময়ে ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবু দ্রুত সতর্কতা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির কারণে এই ধরনের অনেক বড় বিপর্যয় আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
