অভিষেক দাশগুপ্ত (অন্যতম আয়োজক, নেদারল্যান্ডস): ২০১৭ সালের কোনও এক সুন্দর সকালে আমরা কয়েকজন হল্যান্ডবাসী বাঙালী বিদেশের বুকে ষোলোআনা বাঙালিয়ানা বজায় রেখে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো উদযাপন করব স্থির করেছিলাম, গড়ে তুলেছিলাম ‘হল্যান্ডে হৈচৈ’। সেই পুজো ২০২৩ সালে সাত বছর পূর্ণ করল মহাসমারোহে। ভাবলে গর্বে বুক ফুলে ওঠে। তাই ‘হৈচৈ’ এর নামডাক শুনলে একটু আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। ‘হল্যান্ডে হৈচৈ’ বাঙালি, অবাঙালি এমনকি ডাচ পরিবারগুলিকেও এক ছাতার তলায় আনতে পেরেছে। এবছরও মহালয়ার পরের দিন আনন্দনাড়ুর মধ্য দিয়ে দূর্গাপুজো অর্চনা শুরু হয়েছিল। তারপর পঞ্জিকা মেনে পুজোর কাজ সারা হয়। খাবারের মেনুতেও ছিল এপার বাংলা ওপার বাংলার মিশেল। বাঙালির নিজস্ব সাংস্কৃতির নাচ, গান, নাটক, কবিতার অনুষ্ঠান হয়েছিল প্রতিদিন সন্ধেবেলায়। কত প্রতিভা যে লুকিয়ে আছে কতজনের মধ্যে তা এই অনুষ্ঠানগুলি না দেখলে বোঝা যায় না। তবে এবারে আসল চমক ছিল শ্রী অর্ক মুখার্জির লোকসঙ্গীত। তার গানে তিনি দর্শক শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন। এবছরের উল্লেখযোগ্য নতুন তিনটি সংযোজন ‘হল্যান্ডে হৈচৈ’ এর মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে। প্রথমটি হল ২৭ শে এপ্রিল হল্যান্ডে ‘কিংস ডে’। এই দিনটিতে একটি উৎসবের আয়োজন করা হয়। বড় থেকে বাচ্চারা তাদের ব্যবহৃত বা একেবারে নতুন কোনও জামাকাপড়, খেলনা, খেলার সামগ্রী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফ্লি মার্কেটে বসে। ফ্লি মার্কেটে সবাই স্টল খুলতে পারে। সেখানে তারা কোনও জিনিস বিক্রি করতে পারে বা কারও সঙ্গে কোনও জিনিস বিনিময় করতে পারে। এই ধারণাটি বা চিন্তা থেকেই এবারে প্রথম আমরা আমাদের বাচ্চাদের নিজ নিজ নামে স্টল খুলে দিয়েছিলাম। তারা তাদের পুরোনো অথচ ভাল অবস্থায় থাকা জিনিসপত্র বিক্রি করেছিল স্বল্প মূল্যে বা বিনিময় করেছিল অন্য কারোর সঙ্গে। এর মাধ্যমে আমরা তাদের জিনিসের কদর করা, যত্ন করা এবং টাকার মূল্য শেখাতে পেরেছিলাম। ঠিক তেমনি রি–সাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার ব্যাপারটি তুলে ধরতে পেরেছিলাম। বলা বাহুল্য অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম সকলের কাছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হল ক্রিকেট প্রেমী সকলেই যাতে একযোগে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের খেলাটি উপভোগ করতে পারে আবার দুর্গাপুজোর আনন্দ থেকেও বঞ্চিত না হয় তাই আমরা অষ্টমীর দুপুর বেলায় খেলাটি সরাসরি সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা করেছি পুজো মণ্ডপের সামনে। একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা দেখার উত্তেজনা ঠিক তেমনি পুজোর উন্মাদনা চলবে সমানে সমানে। শেষের কথায় আসি। যদিও শেষ হয়েও হবে না যে শেষ। এবারের ‘হল্যান্ডে হৈচৈ’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সবার জন্য সাড়াজাগানো মুভি ‘দশম অবতার’ দেখানো হবে ২৯ অক্টোবর। ইতিমধ্যেই এই মুভি নিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন স্বনামধন্য পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। যেটা সম্ভব হয়েছে ‘হল্যান্ডে হৈচৈ’ ও SVF এর যৌথ প্রচেষ্টায়। এইরকম পদক্ষেপ নিতে পারে একমাত্র ‘হল্যান্ডে হৈচৈ’। তাহলে আমরা এই কথা সহজেই বলতে পারি বিসর্জনের বাজনাটি আমাদের মন দুর্বল করে দিলেও অন্য দিকে, আনন্দের সুরটিও কানে বেজে চলেছে অনবরত। হোক ‘হৈচৈ’।
